ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত টাইরিস হাসপিল নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে। রোববার (১৯ জুলাই) তার আইনজীবীরা আদালতকে জানান, নিউ ইয়র্কের স্থানীয় বাসিন্দা ২১ বছরের হাসপিল-এর বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে এ ধরনের কোনও অভিযোগ ছিল না। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
হোমিসাইড ডিফেন্স টাস্ক ফোর্সের লিগ্যাল এইড অ্যাটর্নি স্যাম রবার্টস এবং নেভিল মিচেল বলেন, এটি একটি জটিল ও দীর্ঘ মামলা। আমরা প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের খুব প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। হাসপিলের অ্যাটর্নি হিসেবে আমরা জনগণকে এ ঘটনায় তাদের দৃষ্টিভঙ্গি উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানাই।
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস জানিয়েছে, আগামী আগস্টে হাসপিলের বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
২০২০ সালের ১৪ জুলাই নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন এলাকার নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফাহিম সালেহ-র ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৭ জুলাই এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় তার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী হাসপিলকে। একইদিন তার বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগ দায়ের করা হয়।
নিউ ইয়র্ক সময় শুক্রবার মধ্যরাতে ম্যানহাটনের ক্রিমিনাল কোর্টে হাসপিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সময় ম্যানহাটনের অ্যাসিসট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি লিন্ডা ফোর্ড জানান, টাইরিস হাসপিলকে দোষী প্রমাণের জন্য ‘পর্যাপ্ত আলামত’ পাওয়া গেছে। নজরদারি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ দেখে এসব আলামত শনাক্ত করা হয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের প্রধান ডিটেকটিভ রোডনি হ্যারিসন সাংবাদিকদের বলেন, ফাহিমের অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিষয়গুলো তদারকি করতো সন্দেহভাজন হাসপিল।
এখন পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২১ বছর বয়সী হাসপিল ফাহিমের ১ লাখ ডলার চুরি করেছিল। এর বাইরেও ফাহিম তার কাছে আরও অনেক ডলার পেতেন। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ লাখ টাকা।
নিউ ইয়র্ক পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান রডনি হ্যারিসন জানান, ‘চুরি করা অর্থের পাশাপাশি হাসপিল আরও বড় অঙ্কের অর্থ ভুক্তভোগীর থেকে ধার নিয়েছিল বলে আমরা ধারণা করছি।’
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসপিল লং আইসল্যান্ড হাইস্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন। তবে ডেইলি নিউজ বলছে, সেই গ্রাজুয়েশন শেষ করতে পারেনি হাসপিল। ফাহিমের সঙ্গে সে কাজ করার সুযোগ পায় একটি প্রতিযোগিতা থেকে।
প্রতিবেদনে গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, হাসপিল হত্যাকাণ্ডকে এমনভাবে সাজাতে চেয়েছিল যাতে মনে হয় এটি কোনও পেশাদার খুনির কাজ এবং এর পেছনে আন্তর্জাতিক যোগসূত্র রয়েছে। তবে তার বেশ কিছু ভুলের কারণে পুলিশ তাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
গোয়েন্দাদের ধারণা, ১৬ বছর বয়স থেকে ফাহিমের সঙ্গে কাজ শুরু করে হাসপিল। ধীরে ধীরে সে ফাহিমের কিছু আর্থিক ও ব্যক্তিগত বিষয় দেখাশোনা শুরু করে। ব্যক্তিগত বিষয়ের মধ্যে নিহতের কুকুরের দেখাশোনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফাহিম তাকে যথেষ্ট পরিমাণ মজুরি দিতেন। এর ফলে হাসপিল তার পরিবারের অনেকের ঋণ শোধ করতে পেরেছে। কিন্তু তারপরও নৃংশস কায়দায় নিজের বসকে হত্যা করে সে।
খুনের পর ফাহিম সালেহ-র কার্ড দিয়ে কেনাকাটাও করে খুনি টাইরিস হাসপিল। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ যখন মরিয়া তখন গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছিল সে। প্রস্তুতি নিচ্ছিল জন্মদিনের পার্টি উদযাপনের। এজন্য খুনের দুই দিনের মাথায় বান্ধবীর ২২তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য ২২ লেখা দুটি বেলুন কিনে সে।
নিরাপত্তা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা নিউইয়র্ক পোস্টের কাছে এই খুনিকে ‘আমেরিকার নতুন সাইকো’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ম্যানহাটনের অ্যাসিসট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি লিন্ডা ফোর্ড বলেন, ‘এ মামলার ক্ষেত্রে বিস্তর প্রমাণ রয়েছে। অপরাধ সংঘটনের আগে ও পরে তাকে (হাসপিল) নজরদারি ক্যামেরায় দেখা গেছে। ভিডিও টেপ দেখে অন্তত দুইজন ব্যক্তি তাকে শনাক্ত করতে পেরেছে।’
ফোর্ড আরও অভিযোগ করেন, ১৩ জুলাই দুপুর প্রায় পৌনে দুইটার দিকে লিফটে করে ফাহিমের পিছু নেয় মাস্ক পরা হাসপিল। লিফটটি ফাহিমের ফ্ল্যাটে পৌঁছানোর পর পরই তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় এবং তার ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। এরপর মরদেহ অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে রেখে সেখান থেকে চলে যায় হাসপিল। পরদিন হোম ডিপো থেকে করাত ও অন্যান্য জিনিসপত্র কিনে আবারও ওই অ্যাপার্টমেন্টে যায় সে।
ফাহিমের মরদেহ টুকরো করা শেষে সেগুলো ব্যাগে ভরে ফেলার পরিকল্পনা ছিল হাসপিলের। তবে তার আগেই ফাহিমের খালাতো বোন এসে কলিংবেল চাপতে থাকলে ভয়ে সিঁড়ি দিয়ে পালিয়ে যায় সে।