আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চলে গেলেন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। রুশ সংবাদ সংস্থার এক প্রতিবেদনে খবরটি নিশ্চিত করে জানায়, রাশিয়ার সেন্ট্রাল ক্লিনিকাল হাসপাতাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গুরুতর ও দীর্ঘকালীন অসুখে ভুগে মিখাইল গর্বাচেভ আজ মারা গেলেন।’
আরও পড়ুন: ৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার
অন্যদিকে, বিবিসি ও রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গর্বাচেভ মারা গেছেন। মস্কোর নোভোদেভিচি সমাধিক্ষেত্রে তার স্ত্রী রাইসার পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।
রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, গর্বাচেভের মৃত্যুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শোক জানিয়েছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গর্বাচেভের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। আগামীকাল তিনি তার পরিবার ও বন্ধুদের কাছে সমবেদনার একটি টেলিগ্রাম পাঠাবেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু সকল মানুষের সম্পত্তি
প্রসঙ্গত, মিখাইল গর্বাচেভ বিশ্বে নন্দিত ও নিন্দিত দুটোই। এক সময়ের কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন গর্বাচেভ। গর্বাচেভ ৫৪ বছর বয়সে ১৯৮৫ সালে ক্ষমতায় আসেন এবং দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নেতা নিযুক্ত হন। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিজমের পতন হলে তিনি দেশটির প্রথম ও একমাত্র প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।
রাশিয়ায় দীর্ঘসময় ধরে চলা সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছিল তার নেতৃত্বেই। ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সোভিয়েতের ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তির দিন তিনি পদত্যাগ করেন।এতে বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল। তাই সমাজতন্ত্রবাদীদের কাছে নিন্দিত গর্বাচেভ স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য নন্দিতও বটে। অনেক রুশের গর্বাচেভকে ঘৃণা করেন। তবে তিনি পেরেস্ত্রোইকা (পুনর্গঠন) ও গ্লাসনস্ত (উন্মুক্ততা) নীতির প্রবর্তক ছিলেন।
আরও পড়ুন: ডেসটিনি চেয়ারম্যান হারুনের জামিন
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরাশক্তি থেকে রাশিয়াকে দুর্দশাগ্রস্ত দেশের কাতারে নিয়ে আসার জন্য অনেক রুশ এখনও গর্বাচেভকে ক্ষমা করতে পারেন না। সোভিয়েত পতনের পর নিজেও ক্ষমতা হারান গর্বাচেভ। এর পর পশ্চিম দেশগুলোতে বক্তৃতা দিয়েই সময় পার করতেন। ১৯৯৯ সালে স্ত্রী রাইসা গর্বাচেভের মৃত্যুতে অনেকটাই ভেঙে পড়েন তিনি।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি করেছিলেন। ১৯৯০ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক জীবনে ফিরে আসার একটি দুর্ভাগ্যজনক প্রচেষ্টা করেছিলেন। পরিবর্তিত রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন গর্বাচেভ, তবে ভোট পেয়েছিলেন মোটে ৫ শতাংশ। রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক সময় কড়া সমালোচক ছিলেন গর্বাচেভ। তবে ২০১৪ সালে পুতিনের নির্দেশে যখন ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া, তখন তার পক্ষেই ছিলেন তিনি। গত বছর গর্বাচভের ৯০তম জন্মদিনে তাকে আবার প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন পুতিন।
সান নিউজ/কেএমএল