ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
৪৬০ কোটি দ্ররিদ্রতম মানুষের হাতে থাকা সম্পদের চেয়ে বেশি সম্পদ মাত্র দুই হাজার মানুষের হাতে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা অক্সফামের এক পর্যবেক্ষণে এই তথ্য উঠে এসেছে। তারা বলছে, মজুরিবিহীন ও কম মজুরি পাওয়া নারী ও মেয়েদের শ্রম প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রযুক্তি শিল্পগুলোর চেয়ে তিনগুণ বেশি মূল্য সংযোজন করছে। তা সত্ত্বেও ২০১৯ সালে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ২,১৫৩ জন মানুষ দরিদ্রতম ৪৬০ কোটি মানুষের চেয়ে বেশি অর্থ নিয়ন্ত্রণ করেছে।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতাদের বার্ষিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম সম্মেলনের আগে সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অক্সফাম। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নারীরা বিনাবেতনে বা স্বীকৃতি ছাড়াই প্রতিদিন মোট এক হাজার ২৫০ কোটি ঘণ্টা কাজ করছে।
‘টাইম টু কেয়ার’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে অক্সফাম জানায়, তাদের হিসাবে নারীদের মজুরিহীন সেবা কাজ প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে অন্তত ১০ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার মূল্য যোগ করছে, এটি প্রযুক্তি শিল্পের যোগ করা মূলের তিনগুণেরও বেশি।
অক্সফাম ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী আমিতাভ বেহার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা যে অর্থনীতিতে আছি, নারীদের মজুরিহীন সেবাই তার অলক্ষ্যে থাকা ইঞ্জিন। এই জায়গাটায় আমাদের নজর দেওয়া উচিত। এটির পরিবর্তন হওয়া দরকার।”
বিশ্ব অর্থনীতির অসাম্যের মাত্রাকে সামনে আনার জন্য বুচু দেবী নামে ভারতীয় এক নারীর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন বেহার। তিনি জানান, বুচু প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা কাজ করেন। তিনি হেঁটে তিন কিলোমিটার দূর গিয়ে সেখান থেকে পানি নিয়ে আসেন, তারপর রান্না করেন, ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেন এবং নিম্নমজুরির একটি কাজ করেন। অপরদিকে আপনি দেখেন, দাভোসে জমায়েত হওয়া বিলিওনিয়াররা তাদের ব্যক্তিগত বিমান, ব্যক্তিগত জেট ও বিলাসবহুল জীবনধারা নিয়ে আছেন।’
আমিতাভ বেহার রয়টার্সকে বলেন, “এই বুচু দেবী শুধু একজনই নন। ভারতে প্রায় প্রতিদিন এ ধরনের নারীদের সঙ্গে আমার দেখা হয়, আর পুরো বিশ্বজুড়েই এই একই গল্প। আমাদের এটি পরিবর্তন করা দরকার আর নিশ্চিতভাবে এই বিলিওনিয়ারের বাড়বাড়ন্তেরও অবসান ঘটানো দরকার।”
এর প্রতিকারের জন্য ধনীদের কর দেওয়া সরকারগুলোর নিশ্চিত করা উচিত বলে মনে করেন বেহার। ওই করের টাকা পরিষ্কার পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও উন্নতমানের স্কুলের মতো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, “বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখুন, ৩০টিরও বেশি দেশে প্রতিবাদ হচ্ছে। লোকজন রাস্তায় নেমে এসেছে। কী বলছে তারা?- তারা এই বৈষম্যকে মেনে নেবে না, তারা এ ধরনের পরিস্থিতিতে আর জীবনযাপন করতে চায় না।”