ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বাংলাদেশি-আমেরিকান মিলিয়নিয়ার ফাহিম সালেহ হত্যায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) নিউইয়র্ক পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি এখনো। পুলিশ বলছে, আটক ওই ব্যক্তিকে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বড় ধরনের কোনো ব্যবসায়িক লেনদেনের জেরেই তাকে খুন করা হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফাহিমের খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরেই একজনকে শনাক্ত করার কথা জানা গিয়েছিল পরদিনই। নিউইয়র্ক পুলিশ বৃহস্পতিবার লোকটিকে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আবোলতাবোল বকতে থাকেন বলে জানা যায়।
আটক হওয়া ঐ ব্যক্তি ফাহিমের পূর্ব পরিচিত ছিলেন। পুলিশের সূত্র ধরে নিউইয়র্কের ‘আই উইটনেস নিউজ চ্যানেল সেভেন’ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তি ফাহিমের সঙ্গে কাজ করতেন। তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক কোনো লেনদেন নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন বলে এর বেশি কিছু জানা যায়নি।
পুলিশের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, খুনি খুবই পেশাদার। এ জন্য আটক হওয়ার পর পাগলের ভান করছেন। কারণ তিনি জানেন, এ ধরনের আচরণ করলে বিচারের সময় আইনগত সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে তাকে ইতোমধ্যে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। আটক ওই ব্যক্তির কাছ থেকে পুরো ঘটনার তথ্য বের করে আনার চেষ্টা করছে নিউইয়র্ক পুলিশ।
ফাহিম সালেহকে মিলিয়নিয়ার সিইও উল্লেখ করে আমেরিকাসহ বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের টানা সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমেও একজন বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে তার পরিচিতি দিয়ে আলাদা সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। ফাহিমের হত্যাকাণ্ড নিউইয়র্ক পুলিশের জন্য হাইপ্রোফাইল মামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ফাহিমের পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকসহ সব মহলের প্রতি তাদের এ কঠিন সময়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধা রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। পারিবারিক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফাহিমের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আসা সংবাদ শিরোনাম এখনো আমাদের অনুধাবনের বাইরে। ফাহিম সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, তিনি এর চেয়েও বেশি ছিলেন।’
পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, ফাহিম সালেহকে খুন করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। খুনি পেশাদার হলেও কাজটা ঠিকমতো শেষ করতে পারেননি। ফাহিমের সঙ্গে লিফটে ওঠা ব্যক্তিকে তার অ্যাপার্টমেন্টেই ঢুকতে দেখা গেছে। অ্যাপার্টমেন্টের দরজা দিয়ে লিফটে করে নেমে আসার কোনো ভিডিওচিত্র পাওয়া যায়নি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফাহিমের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এ জন্য ‘টেজার গান’ নামের চেতনালোপকারী বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করে শুরুতেই ফাহিমকে কাবু করে ফেলেন ঘাতক। তারপর কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অটোসপি রিপোর্টে দেখা গেছে। পরে ইলেকট্রিক করাত দিয়ে ফাহিমের দেহ টুকরা টুকরা করা হয়েছে। ব্লিচ দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করা হয়েছে।
শরীরের বিভিন্ন অংশ নির্মাণকাজে ব্যবহার করা ভারী প্লাস্টিকের ব্যাগে ঢোকানোর সময় লবি থেকে বা বাইরে থেকে কেউ ফাহিমের খোঁজ করতে আসেন। হত্যাকারী ফাহিমের মরদেহ টুকরা টুকরা করে ব্যাগে ভর্তি করেন। এই ফাঁকে ধুয়ে-মুছে রক্ত পরিষ্কার করেন। ঘটনাস্থলে তেমন রক্ত পাওয়া যায়নি। কেউ আসছে বা দরজায় বেল দিচ্ছে, এমন ঘটনার পর হত্যাকারী সাততলা অ্যাপার্টমেন্টের পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে যান। এ জন্য তাকে চাবি ব্যবহার করতে হয়েছে। ফলে ঘাতকের এ ধরনের আপৎকালীন এক্সিট পরিকল্পনা আগে থেকেই নেওয়া ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
সান নিউজ/ এআর