সান নিউজ ডেস্ক: প্রধান পাইপলাইনে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ আরও কমিয়ে দেওয়া হবে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম বলছে, নর্ড স্ট্রিম ১ নামে পরিচিত রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহের প্রধান পাইপলাইনে এই রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে উৎপাদন ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে। যার ফলে বর্তমানের চেয়ে গ্যাস সরবরাহ অর্ধেক কমে যাবে।
আরও পড়ুন: কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আটক
অপরদিকে জার্মানি বলছে, এক্ষেক্রে প্রযুক্তিগত এমন কোনো কারণ তারা দেখছে না। রাশিয়া সরবরাহ আরও কমিয়ে দিলে আসছে শীতের আগে ইউরোপের দেশগুলোর পর্যাপ্ত গ্যাস মজুদ করা কঠিন হয়ে পড়বে। শীতে ইউরোপের দেশে গ্যাসের ব্যবহার অনেক বেশি থাকে।
নর্ড স্ট্রিম ১ গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই সক্ষমতার চেয়ে অনেক কম গ্যাস উৎপাদন করছে। এ মাসেই রক্ষণাবেক্ষণ বিরতির কারণে ১০ দিনের জন্য উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছিল।
ইউরোপের দেশগুলোর ৪০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ রাশিয়া থেকে হয়ে থাকে। জ্বালানিকে রাশিয়া অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো অভিযোগ করে আসছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া অথবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি আসার পর ইউরোপীয় কমিশন তার সদস্য দেশগুলোকে গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: চোখ বন্ধ রাখলে হবে না
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন বলেছেন, রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ একদম পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে তার ‘সমূহ সম্ভাবনা’ রয়েছে।
এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর জ্বালানি মন্ত্রীরা মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ব্রাসেলসে বৈঠকে বসবেন। তবে বেশ কিছু সদস্য দেশ এই পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ নাও করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর গ্যাসের পাইকারি মূল্য ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এর বড় ধরনের ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
গ্যাজপ্রমের ঘোষণার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ ইউরোপের বিরুদ্ধে গ্যাস নিয়ে রাশিয়া একটি প্রত্যক্ষ যুদ্ধ ঘোষণা করেছে- বিষয়টি ঠিক এভাবেই আমাদের দেখা উচিৎ।
গ্যাজপ্রম বলছে, সর্বশেষ যে দুটি টারবাইন কাজ করছে বুধবার (২৭ জুলাই) ‘প্রযুক্তিগত কারণে’ সেখান থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তাতে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া প্রযুক্তিগত কোনো কারণ নেই।
আরও পড়ুন: সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণে ৩ ভাই নিহত
ক্রেমলিন বলে আসছে যে, রাশিয়া একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী দেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতে সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটার সেটাই মূল কারণ।
গ্যাজপ্রম বলছে, কানাডাতে তাদের যেসব যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণ চলছিল, নিষেধাজ্ঞার কারণে সেগুলো ফেরত আসতে দেরি হয়েছে। যার কারণে তারা নর্ড স্ট্রিম ১-এর সরবরাহ ৪০ শতাংশে রাখতে বাধ্য হয়েছে।
কোম্পানির প্রধান নির্বাহী আলেক্সি মিলার বলেন, আমাদের পণ্য, আমাদের নিয়ম। যেসব নিয়মকানুন আমরা তৈরি করিনি সেসব মেনে আমরা কাজ করি না। ইউরো অথবা ডলারের বদলে রুশ মুদ্রা রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে অস্বীকৃতি জানানোর পর বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে গ্যাজপ্রম।
আরও পড়ুন: ঢাকা সফর বাতিল করেছেন হিনা রব্বানী
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী পাঠায় রাশিয়া।
পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তার লক্ষ্যে মস্কো স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।
সান নিউজ/এনকে