সান নিউজ ডেস্ক: ভারতে পরিবেশ দূষণের লাগাম টানা যাচ্ছে না। পরিবেশ দূষণের জন্য যেসব জিনিস দায়ী তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত বর্জ্য। ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে তাই সরকারকে এবার বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হলো।
আরও পড়ুন: স্নেক আইল্যান্ডে ফসফরাস বোমা হামলা
দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য স্ট্র থেকে শুরু করে সিগারেটের প্যাকেট পর্যন্ত একক-ব্যবহারযোগ্য ১৯ ধরনের প্লাস্টিক পণ্যের ওপর শুক্রবার (১ জুলাই) নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, সারা দেশে এখন থেকে একবার ব্যবহার করা যাবে এমন প্লাস্টিক আর ব্যবহার করা যাবে না। এর পরিবর্তে বিকল্প উপায় অবলম্বন করতে হবে।
এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে একক ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ১৯ ধরনের সামগ্রী। ক্যারি ব্যাগের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে প্লাস্টিকের চামচ, কাঁটা-চামচ, প্লাস্টিকের কাপ, প্লাস্টিকের পতাকা, প্লাস্টিকের ইয়ার-বাডস, প্লাস্টিকের ছুরি, ট্রে প্রভৃতি। আর এই নিষেধাজ্ঞা না মানলে কঠোর শাস্তি স্বরূপ জরিমানা করা হতে পারে। এমনকি জেল পর্যন্ত হতে পারে।
একবার ব্যবহারের যোগ্য প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত পণ্য পরিবেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। সে কারণেই এই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ভারত সরকার।
প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিসের প্যাকেট সাধারণত একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া হয়। তাই একে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক বলা হয়। গত বছর প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়।
আরও পড়ুন: অনলাইন টিকিটে ফাঁকফোকর পেলে ব্যবস্থা
একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক খোলা অবস্থায় থাকলে তা থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক নির্গত হয়। আর পরিসংখ্যান বলছে, পুরো বিশ্বে প্রতি মিনিটে প্রায় দশ লাখ প্লাস্টিকের বোতল বা ব্যাগ ব্যবহার করা হয়।
সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকজাত পণ্য বিশ্বব্যাপী বিপদ ডেকে আনছে। কারণ এর জেরে আমাদের পারিপার্শ্বিক এলাকা অপরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। যা পুরো জীবজগতের জন্যই অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এমনকি ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত পণ্য নালা-নর্দমায় গিয়ে পড়ে এবং তা জমতে শুরু করে। ফলে নালা-নর্দমার মুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর পানি মাটির নিচে প্রবেশ করতেও বাধা পায়। শুধু তা-ই নয়, প্লাস্টিকজাত বর্জ্য নদী এবং সাগরের তলদেশেও পৌঁছে যাচ্ছে। যার ফলে সামুদ্রিক জীবজন্তুর জীবনও বিপন্ন হয়ে উঠছে।
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ একক প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক রূপে নিষিদ্ধ করেছে। যার মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের ৩০টি দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। ইউরোপে প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহারের উপর আলাদা করে কর কিংবা চার্জ ধার্য করা হয়।
অন্য দিকে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আবার প্লাস্টিক ব্যাগের তৈরি কিছু সামগ্রী নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চেষ্টা চলছে। তবে বলা ভালো যে, প্লাস্টিকের ব্যবহারের ওপর সবচেয়ে কার্যকর নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র আফ্রিকার দেশগুলোতেই জারি করা হয়েছে।
২০০৮ সাল থেকেই পাতলা প্লাস্টিকের ফয়েল ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে চীন। কিন্তু মজবুত প্লাস্টিকের ব্যাগ টাকা দিয়ে কিনে ব্যবহার করা যায়। ২০২০ সালে চীন ঘোষণা করেছিল যে, তারা ধীরে ধীরে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারে রাশ টানবে। বর্তমানে চীনের প্রধান শহরগুলোতে পচনশীল নয়, এমন প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ বছর তা পুরো দেশেই কার্যকর হবে।
সান নিউজ/এনকে