ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
করোনায় আক্রান্ত হয়েও ম্যালেরিয়ার ওষুধ খাচ্ছেন ব্রাজিলের বলসোনারো। যা নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।
''আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। ইচ্ছে করছে সামনে গিয়ে একটু হাঁটতে। কিন্তু চিকিৎসকরা নিষেধ করেছেন। তাই হাঁটতে পারছি না।'' করোনা ধরা পড়ার পরে এ ভাবেই সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের স্বাস্থ্যের খবর জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারো।
একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খেতেও শুরু করে দিয়েছেন। যদিও করোনার চিকিৎসায় আদৌ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কাজ করে কি না, তা নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে তীব্র মতভেদ আছে। বিতর্ক আছে তার দেশের স্বাস্থ্য মহলেও। কোনও কোনও দেশে ওষুধটি বাতিলও হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভয়াবহ।
করোনা-কালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। দেশে যখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে, তখন তিনি বলেছিলেন, ব্রাজিলে অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষের করোনা হবেই। কোনও ভাবেই তা আটকানো যাবে না। কিন্তু করোনা আটকানোর জন্য কোনও কোনও প্রদেশের স্থানীয় প্রশাসন যে ভাবে লকডাউনের কথা বলছে, তাতে অর্থনীতি ধসে পড়বে। সাধারণ মানুষ আরও সমস্যায় পড়বেন।
গোড়া থেকেই করোনা ভাইরাসকে 'সাধারণ ফ্লু'য়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। বলেছেন, তিনি একজন প্রাক্তন খেলোয়াড়। কোনও ভাবেই তাকে করোনা ছুঁতে পারবে না।
তবে শেষ রক্ষা হলো না। এর আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের করোনা হয়েছিল। তিনিও প্রথম পর্যায়ে করোনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি। এ বার আক্রান্ত হলেন বলসোনারো।
করোনা ধরা পড়ার কয়েক দিন আগে পর্যন্তও সমর্থকদের মাঝে থেকেছেন প্রেসিডেন্ট। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। এমনকী, তার বাসস্থানের বাইরে প্রতিবাদীদের মঞ্চেও পৌঁছে গিয়েছেন। সামাজিক দূরত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে তার সহকর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনা। সমস্যা হলো, করোনা ধরা পড়ার পরেও আইসোলেশনের ন্যূনতম নিয়ম মানছেন না বলসোনারো।
যদিও প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বক্তব্য, সোমবার রাত থেকেই জ্বর আসে বলসোনারোর। তার পর থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকলের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। কাউকে কাছে আসতে দিচ্ছেন না।
ব্রাজিলে করোনা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা খানিকটা হলেও কমেছে। কিন্তু দেশের এক বড় অংশের মানুষের দাবি, সরকার এবং প্রশাসন করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশেরও তাই অভিমত।
বস্তুত, গত এপ্রিল মাসে বলসোনারো নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন। স্বাস্থ্য বিষয়ে যার কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন একজন চিকিৎসক। করোনার চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহারে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সেই আপত্তি শুনতে চাননি। তার জেরেই ওই চিকিৎসক পদত্যাগ করেন।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রেসিডেন্ট নিজেই জানিয়েছেন, তিনি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খাচ্ছেন। দেশের ভিতরেই বহু বিশেষজ্ঞ এর প্রতিবাদ করে বলেছেন, ভুল চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করছেন বলসোনারো।
যদিও প্রেসিডেন্টের চিকিৎসকদের বক্তব্য, ওষুধটি কাজ করছে। জ্বর পুরোপুরি না কমলেও বলসোনারোর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, আক্রান্ত হওয়ার পরেও প্রেসিডেন্ট যে আচরণ করছেন, তা ঠিক নয়। করোনা ভাইরাস দ্রুত ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। ফলে প্রেসিডেন্টের আরও সতর্ক থাকা উচিত।