সান নিউজ ডেস্ক: প্রথমবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হবার পরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরও কার্যকর ও মজবুত করে তোলার উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখিয়েছিলেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তবে বিশেষ করে জার্মানির কাছ থেকে তেমন সাড়া না পেয়ে সেই উদ্যোগ সীমিতই থেকে গেছে৷ দ্বিতীয় কার্যকালের শুরুতে ইউরোপকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ৫৮২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন
বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাক্রোঁ ইউরোপীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে এমন এক রাজনৈতিক রাষ্ট্রজোট গড়ে তুলতে চান তিনি, যার মধ্যে ইইউ সদস্য না হয়েও ব্রিটেন ও ইউক্রেনের মতো দেশ স্থান পাবে।
সোমবার (৯ মে) ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপ দিবস উপলক্ষ্যে এক ভাষণে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট তার প্রস্তাবিত জোটের রূপরেখা তুলে ধরেন৷ ম্যাক্রোঁর মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্য হয়ে উঠতে ইউক্রেনের কয়েক বছর বা দশক সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুন: দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২৮২৪ ডলার
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের আবেদনের ভিত্তিতে আগামী জুন মাসে প্রাথমিক জবাব দেবে ইইউ কমিশন। আপাতত ইইউ-র সঙ্গে ‘অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি'-র ভিত্তিতে সে দেশ কিছু সুবিধা ভোগ করছে। এবার প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও যোগদানের প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে পারে। কড়া শর্ত মেনে প্রয়োজনীয় সংস্কার চালাতে হবে ইউক্রেনকে। ইইউ-র যে কোনো সদস্য দেশ সেই প্রক্রিয়া বানচাল করতে ভেটো শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। রাশিয়ার হামলার মুখে ইইউ ঐক্যবদ্ধভাবে ইউক্রেনের সহায়তা করলেও সে দেশের ইইউ-তে যোগদানের বিষয়ে মতবিরোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ম্যাক্রোঁ নিজেও ইইউ-তে যোগদানের শর্ত শিথিল করার বিপক্ষে।
এমন অচলাবস্থা এড়াতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ‘ইউরোপীয় রাজনৈতিক কমিউনিটি' গড়ে তোলার প্রস্তাব রেখেছেন। গণতান্ত্রিক ইউরোপীয় দেশগুলি মৌলিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে সেই জোটে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে বলে মাক্রোঁ আশা করেন। ইউক্রেনের মতো যে সব দেশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করেনি, সেগুলিও এই বৃহত্তর ইউরোপীয় পরিবারের অংশ হতে পারে। ইইউ ত্যাগ করা দেশ ব্রিটেনও সেটি জোটের অংশ হতে পারে।
ম্যাক্রোঁর প্রস্তাব অনুযায়ী এই ইউরোপীয় রাজনৈতিক জোটের সদস্যরা রাজনীতি, নিরাপত্তা, জ্বালানি, পরিবহন, বিনিয়োগ, অবকাঠামো, মানুষ চলাচলের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে। তবে এই জোটের সদস্য হলেই ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের কোনো গ্যারেন্টি থাকবে না।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ৮ জনের যাবজ্জীবন
নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের পাশাপাশি সংস্কারের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিত্তিও আরও মজবুত করতে চান ম্যাক্রোঁ। ইইউ চুক্তিগুলি সংশোধনের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলির মধ্যে আরও গভীর সহযোগিতা চান তিনি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক প্রস্তাব অনুযায়ী সেই লক্ষ্যে এক কনভেন্ট আহ্বান করার পক্ষে সমর্থন জানান ম্যাক্রোঁ। বিগত এক বছর ধরে ইইউ নাগরিকদের সঙ্গে সংলাপের এক প্রক্রিয়ার শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে বক্তব্য রাখেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
নিজেকে ইউরোপের সংস্কারক হিসেবে তুলে ধরে ম্যাক্রোঁ যে সব প্রস্তাব রেখেছেন, তার ফলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেক দেশ মনে করছে, বিষয়গুলি নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা ছাড়াই ম্যাক্রোঁ তড়িঘড়ি করে প্রস্তাব হিসেবে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে ইউরোপের উত্তর ও পূর্বাংশের ১৩টি সদস্য দেশ মনে করে, যে সাম্প্রতিক সংকটগুলিতে ইইউ প্রচলিত চুক্তির ভিত্তিতেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস মাক্রোঁর প্রস্তাব শুনে আপাতত ‘ইন্টারেস্টিং' হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
সান নিউজ/এনকে