সান নিউজ ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আফ্রিকার দেশগুলোতে খাদ্য সংকট সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। বৃহস্পিতবার (২৮ এপ্রিল) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই দাবি করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি। ইয়েনি সাফাকের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েরছ।
আরও পড়ুন: শান্তি চুক্তি প্রস্তাবে ইউক্রেনের সাড়া নেই
বলা হয়েছে, আফ্রিকান দেশগুলোর বেশিরভাগই তেল, সার, গম জাতীয় খাবার আমদানির জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। আর এই যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী পণ্যের বাজারকে ব্যাহত করার পাশাপাশি আফ্রিকার বাণিজ্য প্রবাহকে ব্যাহত করেছে। এসব অঞ্চলে খাদ্যমূল্যকে বৃদ্ধি করেছে। এমনকি যারা এই দুই দেশ থেকে সামান্য পরিমাণ পণ্যও আমদানি করত তারাও বিশ্বমূল্যের কারণে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হচ্ছে বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি।
এইচআরডব্লিউর দারিদ্র্য ও বৈষম্য বিষয়ক সিনিয়র গবেষক লেনা সিমেট বলেন, আফ্রিকার অনেক দেশ ইতোমধ্যে খাদ্য সংকটে রয়েছে। আর করোনা মহামারির কারণে ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি ইতোমধ্যে দরিদ্রসীমার নিচে থাকা সেসব মানুষের পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। এ বিষয়ে সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে জরুরি পদক্ষেপে প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরও বলা হয়, যুদ্ধের আগে আফ্রিকার দেশগুলো বিশেষ করে- নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ক্যামেরুন ও অ্যাঙ্গোলা ইতিমধ্যেই বন্যা, ভূমিধস এবং খরার মতো চরম পরিস্থতির কারণে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে লড়ছিল। আর এর পরে করোনা মহামারি তাদের উৎপাদন প্রচেষ্টা এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ চেইন ব্যাহত করেছে।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর চলাকালে কিয়েভে হামলা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের আগে কেনিয়ায় ১০ জনের মধ্যে ৭ জন, ক্যামেরুনে জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি এবং নাইজেরিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ১০ জনের মধ্যে প্রায় ছয়জন ইতিমধ্যেই খাদ্য অনিরাপত্তায় ভুগছিল। আর এই যুদ্ধ পরিস্থিতি সেটিকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে গেছে।
এর আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, যুদ্ধ এভাবে চলতে থাকলে খাদ্যপণ্যের রেকর্ড দাম বৃদ্ধি লাখ লাখ মানুষকে অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এটা একটি মানবিক বিপর্যয়। আবার একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে এটি একটি রাজনৈতিক সংকটেও পরিণত হচ্ছে। আর তারা এই সংকট মোকাবিলায় কিছুই করতে পারছে না। এর জন্য তারা দায়ী না হয়েও তারা দেখছে যে, দাম বেড়েই চলেছে।
আরও পড়ুন: এমন যুদ্ধ অযৌক্তিক
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, খাদ্যপণ্যের দামে বড় ধরনের উল্লম্ফন হতে পারে (৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি)। এটি গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক বেশি মনে করেন ম্যালপাস।
তিনি বলেন, বিপর্যয়ে তারা নিজেরা কম খেতে এবং সন্তানকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করতে বাধ্য হতে পারে খরচ কমানোর জন্য। এর মানে দাঁড়াচ্ছে— এটি সত্যিকারের একটি অন্যায্য সংকট। এটি দরিদ্রদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করবে। করোনা মহামারীতেও একই ধরনের বাস্তবতাই দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: ইথিওপিয়ায় সশস্ত্র হামলায় ২০ মুসল্লির মৃত্যু
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী পাঠায় রাশিয়া।
পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তার লক্ষ্যে মস্কো স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।
সান নিউজ/এনকে