আন্তর্জাতিক

আবারও রাখাইনে সেনা অভিযানের পরিকল্পনা

ইন্টারন্যাশনালা ডেস্ক:

মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযানের’ পরিকল্পনা করছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ বিষয়ে কয়েক ডজন গ্রাম প্রধানকে সতর্কবার্তা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

এ খবরে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে রাখাইন রাজ্যের হাজার হাজার বাসিন্দা। মিয়ানমারের এক আইনপ্রণেতা ও একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী এ তথ্য জানিয়েছে।

দেশটির সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সীমান্ত বিষয়ক কর্মকর্তারা একটি উচ্ছেদ আদেশ জারি করে। তবে পরবর্তীতে সেটিকে প্রত্যাহার করা হয়।

সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এই আদেশ জারির বিষয়টি স্বীকার করে। তবে তাদের দাবি, অল্প কয়েকটি গ্রামেই এর প্রভাব পড়েছে।

গত বুধবার একটি চিঠিতে গ্রাম প্রধানদের ওই সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিলো। চিঠিটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স পেয়েছে এবং সেটিকে রাখাইন রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রী কর্নেল মিন থানের দ্বারা যাচাই করা হয়েছে।

রাথেডাউং পৌরসভার প্রশাসক অং মিন্ট থেইনের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে গ্রাম প্রধানদের বলা হয়েছে, পৌরসভার কিউকতান গ্রাম ও এর নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে বিদ্রোহীদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাই সেখানে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে তাকে অবহিত করা হয়েছে।

তবে অভিযানের আদেশটি কোথা থেকে এসেছে সেটি উল্লেখ নেই ওই চিঠিতে।

এদিকে নিরাপত্তা ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রী মিন থান রয়টার্সকে জানান, তার মন্ত্রণালয় থেকেই ওই নির্দেশটি দেয়া হয়েছিলো। মন্ত্রণালয়টি মিয়ানমার সরকারের সেই ৩টি মন্ত্রণালয়ের একটি যা দেশটির সেনাবাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

চিঠিতে আরাকান বাহিনীর (এএ) নাম উল্লেখ করে বলা হয়, সেনাবাহিনী ওই গ্রামগুলোতে শুদ্ধি অভিযান চালাবে। অভিযান চলাকালে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যদি লড়াই শুরু হয় তবে তখন আপনারা গ্রামে থাকবেন না। অস্থায়ীভাবে আপনারা গ্রাম থেকে দূরে থাকবেন।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য রাথেডাউং এর প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে রয়টার্স। তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মিন থান জানান, চিঠিটিতে উল্লেখিত ‘শুদ্ধি অভিযান’ বলতে ‘সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান চালানোর কথা বলা হয়েছে।

চিঠিতে প্রশাসক মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া নির্দেশের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিন থান। তিনি বলেন, কয়েক ডজন গ্রামে অভিযান চালানো হবে কথাটি ভুল। কয়েক ডজন না, বরং মাত্র কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালানো হবে। তবে চিঠিতে উল্লেখিত অন্য বিষয়গুলো সঠিক বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। টেলিফোনে মিন থান বলেন, এই অভিযান এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

শনিবার ফেসবুকে দেয়া এক বিবৃতিতে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাও হতাই বলেন, সরকার সামরিক বাহিনীকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ কথাটি ব্যবহার না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলো। এছাড়া লোকজনকে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া চিঠিটিও প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এই বিষয়ে আরো তথ্যের জন্য হতাইর সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগের চেষ্টা করে রয়টার্স। তবে তিনি রয়টার্সের ফোন কলের জবাব দেননি। এছাড়া রয়টার্স চিঠি প্রত্যাহারের ওই নির্দেশ দেখেনি বলেও জানিয়েছে।

আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই চলছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর। আরাকানরা রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এরা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে।

এই সংঘর্ষে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। স্থানীয় পর্যবেক্ষণ দলগুলোর বরাত দিয়ে সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে সেখানে প্রায় ১৮ জন শিশু মারা গেছে। এছাড়া আরো ৭১ জন শিশু আহত হয়েছে। তবে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে না তারা।

এর আগে, ২০১৭ সালে রাখাইনের মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানকে বর্ণনা করতেও ‘শুদ্ধি অভিযান’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলো মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ। ওই অভিযান চলাকালে হাজার হাজার রোহিঙ্গা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। অভিযান চলাকালে সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যা ও অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ করেছে রোহিঙ্গারা। তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনীর ওই অভিযান চলাকালীন সময় লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

রোববার (২৮ জুন) এক বিবৃতিতে কিউকতানে তীব্র লড়াইয়ের ফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এক প্রতিবেদনে বলা রয়েছে, সেখানে লোকজন আটকা পড়েছে এবং ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে ফের মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালানোর পরিকল্পনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটিতে অবস্থিত যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দূতাবাস।

মন্ত্রী মিন থান জানিয়েছেন, নতুন অভিযানের আশঙ্কায় কিউকতান থেকে প্রায় ৮০ জন লোক রাথেডাউং পৌরসভার অন্য এলাকায় চলে গেছে। সেনাবাহিনী তাদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সূত্র- রয়টার্স।

সান নিউজ/সালি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মা হচ্ছেন সানা সৈয়দ

বিনোদন ডেস্ক: বিয়ের ৩ বছর পর মা হতে চলেছেন ‘কুণ্ডলী ভা...

রাঙ্গামাটিতে সংঘর্ষে নিহত ১

জেলা প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ির সহিংসতার উত্তাপ রাঙ্গামাটিতে ছড়িয়...

অস্ত্রসহ আরসার কমান্ডার গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলার উ...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ...

বুরহানউদ্দিন রব্বানী’র প্রয়াণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের ঘটনা কাল...

ছেলের লাঠির আঘাতে বাবার মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: শরীয়তপুর জেলার জা...

অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট

জেলা প্রতিনিধি: রাঙামাটিতে সংঘর্ষের ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন...

৭০ হাজারের বেশি সেনা হারিয়েছে রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্...

নূরজাহান’র জন্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের ঘটনা কাল...

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

সান নিউজ ডেস্ক: প্রতি সপ্তাহের এক...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা