ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
ভারত সীমান্তের তিনটি বিতর্কিত এলাকাকে দেশের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে যিনি প্রায় রাতারাতি নেপালের জাতীয় নায়কে পরিণত হয়েছিলেন, সেই প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি-র পদত্যাগের দাবি তার দলের ভেতরেই জোরালো হচ্ছে।
কাঠমান্ডুতে এখন কমিউনিস্ট পার্টির যে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক চলছে, সেখানে ওলি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন এবং এই বৈঠকেই তার অপসারণের পথ প্রশস্ত হতে পারে বলে নেপালে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
সাবেক মাওবাদী নেতা ও বর্তমানে নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির দলীয় প্রধান প্রচন্ড-ই (পুষ্প কুমার দহাল) কে পি ওলি-র বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আর প্রতিবেশী ভারত গোটা ঘটনাপ্রবাহের দিকে সতর্ক নজর রাখছে, নেপালে ক্ষমতার সম্ভাব্য পালাবদলে তাদেরও প্রচ্ছন্ন সায় আছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু কে পি ওলি কীভাবে হঠাৎ এই রাজনৈতিক বিপদের মুখে পড়লেন?
আসলে নেপালে বর্তমান শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টি যখন গঠিত হয়েছিল, তখন তাতে দুটি অংশ ছিল−সিপিএন-ইউএমএল আর মাওয়িস্ট সেন্টার। প্রথমটির নেতৃত্বে ছিলেন কে পি ওলি আর দ্বিতীয়টির প্রচন্ড।
২৭৫ আসনের পার্লামেন্টে এই দলের এখন মোট ১৭৪ জন এমপি আছেন, যার মধ্যে সিপিএন-ইউএমএলের ১২১ জন আর মাওয়িস্ট সেন্টারের ৫৩ জন, আর এই দুই দলের সংযুক্তির মাধ্যমেই সভায় কমিউনিস্টেদের গরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়েছিল।
দুই পার্টির সংযুক্তির সময়েই স্থির হয়েছিল, কে পি ওলি (যার পুরো নাম খড়গ প্রসাদ শর্মা ওলি) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারি ও প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখবেন, দলের কাজকর্মে নাক গলাবেন না। আর প্রচন্ড দলীয় প্রধান হিসেবে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করবেন। কিন্তু এই ফর্মুলা আদৌ মসৃণভাবে কাজ করেনি, প্রথম দিন থেকেই কে পি ওলি ও প্রচন্ডর মধ্যে সংঘাত ছিল, যা এখন চরমে পৌঁছেছে।
নেপালের রাজনৈতিক ভাষ্যকার সজীব শাক্য এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে বলেন, 'প্রচন্ড এখন প্রকাশ্যেই বলছেন কে পি ওলির সঙ্গে সমঝোতা করাটা ছিল তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। তিনি এখন সম্ভবত বুঝতে পারছেন পার্টিতে বেশিরভাগ এমপি-র সমর্থন ওলির কাছ থেকে সরে গেছে, আর সেই সুযোগে তিনি ওলি-কে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।'
'দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট' পত্রিকা তো আরও জানাচ্ছে, চলতি সপ্তাহে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে প্রচন্ড নাকি প্রধানমন্ত্রী ওলিকে সরাসরি হুমকি দিয়েছেন।
ওই পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী, বৈঠকে প্রচন্ড নাকি প্রধানমন্ত্রী ওলির উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমরা খবর পাচ্ছি আপনি বাংলাদেশ, আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো রাস্তা নিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছেন! সোজাসুজি বলতে চাই, পার্টিতে ভাঙন ধরিয়ে বা বিরোধী দলের সাহায্য নিয়ে আপনি সরকার চালাতে পারবেন না!’
নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান বামদেব গৌতমও গত মাসে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘মানচিত্রে পরিবর্তন আনার সব কৃতিত্ব যেন কে পি ওলি একা নেওয়ার চেষ্টা না-করেন।’ তিনিও এখন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থা স্ট্যান্ডিং কমিটির ৪৪ জন সদস্যের বেশিরভাগই এখন ওলি-বিরোধী শিবিরে।
এই 'বিদ্রোহ' আশঙ্কা করেই কে পি ওলি বহুদিন ধরে দলীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক আটকে রেখেছিলেন। এমনকি দীর্ঘ ছয় মাস পরে যখন এ সপ্তাহে তার বাসভবনেই সে বৈঠক বসে, নিজে বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও তিনি সে বৈঠকে প্রথমে আসেননি। আর ইতোমধ্যে ওলিকে প্রধানমন্ত্রিত্ব সরানোর জন্য ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছেন প্রচন্ড।