আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রুশ সেনাবাহিনী যদি ইউক্রেন দখল করে নেয় তবে প্রবাসী সরকার গঠনের চিন্তাভাবনা করছে দেশটির পশ্চিমা মিত্রদেশগুলো। পশ্চিমা কর্মকর্তাদের সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ কথাই জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
আরও পড়ুন:আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রসদ ও মনোবল ঘাটতিতে থাকা রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। কিন্তু যুদ্ধ মাত্র ২ সপ্তাহে গড়িয়েছে।
মার্কিন ও ইউরোপের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, রাশিয়ান বাহিনী প্রাথমিক ক্ষয়-ক্ষতি দ্রুতই সামলে নেবে এবং এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি রক্তাক্ত লড়াই শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে গড়ে ওঠা ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ অব্যাহত রাখার জন্য পরিকল্পনা করছে পশ্চিমারা।
কর্মকর্তারা সেই পরিকল্পনার বিস্তারিত না জানালেও কিয়েভের সম্ভাব্য পতন বিবেচনায় নিয়েই তারা ইউক্রেনের প্রবাসী সরকার গঠনের পরিকল্পনা নিতে শুরু করেছেন। রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এই লড়াই হতে পারে গেরিলা যুদ্ধ।
কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র পাঠিয়েছে, যা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। গেরিলা যুদ্ধের সফলতার জন্য এই অস্ত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন প্রশাসন ইতিমধ্যে ইউক্রেনে মানবিক ও সামরিক সহায়তার জন্য ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড় দিতে কংগ্রেসকে অনুরোধ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্কিন ও তার মিত্ররা যদি গেরিলা যুদ্ধকে সমর্থন দেয়, তাহলে রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনে নাগরিকদের মনোবল ধরে রাখতে এবং শত্রু রুশ সেনাদের প্রতিহত করতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হবেন প্রধান শক্তি।
মস্কোর হাতে কিয়েভ পতনের বিষয়টি ধরে নিয়েই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সামরিক দফতর পেন্টাগনসহ অন্য সংস্থাগুলো যেসব পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, তার মধ্যে জেলেনস্কি সরকারের দেশ ছাড়ার বিষয়টিও রয়েছে।
আরও পড়ুন:৭ মার্চের ভাষণ এক মহামন্ত্র: রাষ্ট্রপতি
স্পর্শকাতর বিষয় বিবেচনায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা প্রতিটি ঘটনার জন্য সম্ভাব্য পরিকল্পনা তৈরি করছি। এর মধ্যে পোল্যান্ডে জেলেনস্কির প্রবাসী সরকার গঠনের বিষয়টিও রয়েছে।
আরও পড়ুন:আজ বাঙালির জীবনে অবিস্মরণীয় দিন
প্রসঙ্গত, জেলেনস্কি বলেছিলেন, রাশিয়া তাকে এক নম্বর লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। তিনি কিয়েভেই আছেন, দেশ ছাড়বেন না। জেলেনস্কির জন্য নিরাপদ স্থান পোল্যান্ড সীমান্তের কাছাকাছি লিভ শহরে যাওয়া উচিত কি না, সে বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার আলোচনাও হয়েছে।
ইউক্রেনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলছেন, জেলেনস্কির নিরাপত্তা বিবেচনায় তাকে এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের দ্রুত অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তিনি কিয়েভ ছাড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রাশিয়ান সেনাবাহিনী কিয়েভ দখল করলে ইউক্রেন সরকার কী করবে, সেই পরিকল্পনার কথা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন জেলেনস্কির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোদোলিয়াক।
তিনি বলেন, রুশ বাহিনীর কিয়েভ আক্রমণের মুখে ইউক্রেন প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লড়াই ইউক্রেনের মানুষের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। আমাদের অবশ্যই যুদ্ধে জিততে হবে। আর কোনো উপায় নেই।
ইউক্রেনের বিরোধী দল ইউরোপীয় সলিডারিটি পার্টি থেকে নির্বাচিত সাংসদ ভলোদিমির আরিয়েভ বলেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও অনেক আইনপ্রণেতা কিয়েভে রয়েছেন। আমাদের দলে এখনো শহর ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি।
আরও পড়ুন:বিশ্বে করোনায় একদিনে ৪ হাজার মৃত্যু
কারণ, আমরা হাল ছাড়ছি না। আমরা সরকারে নেই কিন্তু আমাদের অস্ত্র আছে। আমরা জনগণের সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।
আরও পড়ুন:ইউক্রেন অস্ত্র না ফেললে অভিযান চলবে
অপরদিকে কিয়েভের পতন হলে বা পুরো ইউক্রেন রাশিয়ার দখলে গেলে দেশটির সরকারকে কীভাবে সমর্থন দেবে, তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন মার্কিন ও ইউরোপীয় কূটনীতিকেরা।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের মৃত্যু
ইউরোপের একজন শীর্ষ কূটনীতিক বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা জানিয়ে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব আনা হয়। সেখানে জেলেনস্কির সরকারকে বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। প্রবাসী সরকারের ভিত্তিও এতে রচিত হয়েছে।
সান নিউজ/ এইচএন