ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত প্রায় ৪ লাখ ৫৯ হাজার মা ও শিশুর জীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে মনে করছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ।
জন হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণার বরাত দিয়ে ইউনিসেফ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ৬ মাসের মধ্যে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে আরও বলা হয়েছে, এখানে চরম দরিদ্র পরিবারগুলো দিনে তিন বেলা খাবার জোগাতে পারছে না।
বাংলাদেশে করোনা রোধে যান চলাচল বন্ধ ও সংক্রমণের ভয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে না যাওয়াকে শিশুদের পুষ্টি বঞ্চনার অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে।
‘লাইভস আপএনডেড’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ইউনিসেফ বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিতে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দেয়, তা সত্ত্বেও লকডাউনের সময় সেবা প্রাপ্তির সীমিত সুযোগ এবং অভিভাবকদের সংক্রমণের আশঙ্কার কারণে এপ্রিল মাসে কেবলমাত্র অর্ধেক শিশু তাদের নিয়মিত টিকা নিতে পেরেছে।
জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ কর্তৃক মে মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির পরোক্ষ কারণে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে আগামী ছয় মাসে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৮ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমু হোজুমি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর ক্রমবর্ধমান ক্ষতির প্রেক্ষাপটে শিশুদের ওপর এর প্রভাব ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের জীবন রক্ষাকারী টিকাদান কার্যক্রম এবং পুষ্টিজনিত সেবা অব্যাহত রাখতে হবে। যেহেতু বাবা-মায়েরা এসব সেবা অনুসন্ধান করে এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা প্রদান করে, তাই বাবা-মা স্বাস্থ্যকর্মী- উভয় শ্রেণিই যাতে নিরাপদে থাকে এবং নিরাপদ বোধ করে সেটাও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্কুলগুলোকেও যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদে পুনরায় চালু করতে হবে এবং শিশুদের জন্য হেল্পলাইনগুলোকেও আমাদের চালু রাখতে হবে। ইউনিসেফ এই সবক্ষেত্রেই সরকারকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশ; বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ এবং শ্রীলংকার শিশুদের বর্তমান অবস্থার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এরইমধ্যে এসব দেশের ২৪ কোটি শিশু বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে এই অঞ্চলের ১২ কোটি শিশু আর্থিক সচ্ছলতা হারিয়ে দরিদ্র হয়ে পড়বে। দক্ষিণ এশিয়া একটি জনবহুল অঞ্চল। এখানে বসবাস করে পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ মানুষ। আর বিগত কয়েক সপ্তাহে এই অঞ্চলের নানা দেশে করোনার সংক্রমণ যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আঞ্চলিক বৃহৎ দেশ ভারতে সংক্রমিত এখন চার লাখ ৪০ হাজার।
এই অবস্থায় 'পাল্টে যাওয়া জীবন: কীভাবে কোভিড-১৯ দক্ষিণ এশীয় ৬০ কোটি শিশুর ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে' শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ।
প্রতিবেদনের মূল বক্তব্যেই বলা হয়েছে, শিশু-কিশোরদের এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম একথা সত্য, কিন্তু তাদের জন্য সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হচ্ছে অর্থনৈতিক দৈন্য। সংক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টাকালে দেখা দেয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয় শিশুর আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তন করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার সুযোগ থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।
ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক প্রধান জিন গফ বলেন, এ অঞ্চলে চলমান মহামারি এবং সে কারণে চালু করা লকডাউন শিশুদের নানাদিক দিয়ে ক্ষতির শিকার করেছে। কিন্তু, অচলাবস্থার ফলে সৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক মন্দায় শিশুদের দুর্গতি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আগামীদিনের প্রজন্মের সম্পূর্ণ ভবিষ্যৎ এবং সমৃদ্ধির আশা হারিয়ে যেতে পারে।'
ইউনিসেফের আঞ্চলিক শিক্ষা উপদেষ্টা জিম একারস বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে আমাদের যত্নবান হতে হবে। শিশু-কিশোরেরা যেন শিক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিয়ে আগামী দিনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে গড়ে উঠতে পারে এবং স্থানীয় অর্থনীতি পুনঃগঠনে নাগরিক হিসেবে অবদান রাখতে পারে, তা নিশ্চিত করা উচিত সকলের।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত নেওয়া পদক্ষেপগুলো পর্যাপ্ত নয়, এমনকি কিছু কিছু দেশে এ ধরনের কোনও উদ্যোগও নেয়া হয়নি।
সান নিউজ/সালি