আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সামরিক হামলার মাধ্যমে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এই বিষয়ে বিশ্ব আনবিক শক্তি অ্যাসোসিয়েশন সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির পরিচালক রাফায়েল মারিয়ানু গ্রোসি।
আরও পড়ুন: বাঘিনীদের হুংকারে গুটিয়েছে আফ্রিকা
পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র আক্রান্তের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে শুক্রবার নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদর দফতরে জরুরি বৈঠকে বসে নিরাপত্তা পরিষদ। এ ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য এবং অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ বলে অভিহিত করা হয়।
এদিকে, জাতিসংঘের জেনেভাস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বৈঠকে ইউক্রেনে আগ্রাসন তদন্তে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করা হয়।
শুক্রবার ( ৪ মার্চ) স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় জাতিসংঘ সদর দফতরে ইউক্রেনের পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রাশিয়ার হামলায় আগুন লেগে যাওয়ার ঘটনায় জরুরি বৈঠক বসে।
ইউক্রেনে চলমান রুশ ফেডারেশনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়ার এক সপ্তাহ পর ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা কাউন্সিলে প্রতিবেদন পেশ করতে গিয়ে জাতিসংঘের রাজনৈতিক ও শান্তিরক্ষা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোজমেরি ডিকার্লো বলেন, এ বিপর্যয়কর পারমাণবিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা উচিত।
তিনি আরো বলেন, রাশিয়ান সেনাবাহিনীর দ্বারা ইউক্রেনের শহরগুলো প্রবল আক্রমণের মধ্যে রয়েছে এবং ইতোমধ্যেই দেশটির এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এছাড়া জাপোরঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা জেনেভা কনভেনশনের অতিরিক্ত প্রটোকল ১ এর ৫৬ অনুচ্ছেদের বিরোধী।
এসময় তিনি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের স্মরণ করিয়ে দেন ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল বিপর্যয় একটি দীর্ঘস্থায়ী উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে যে কেন সমস্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
ঘটনার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানাতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা ( আইএইএ)-এ পরিচালক রাফায়েল মারিয়ানু গ্রোসি।
তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগে রাশিয়ার পক্ষ থেকে আইএইএ-কে জানানো হয় যে রাশিয়ান বাহিনী জাপোরঝিয়া পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্র অঞ্চলের দিকে যাচ্ছে। সেখানে ইউক্রেনের জনগণের দ্বারা তারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। পরে রাশিয়ার পক্ষ থেকে একটি প্রজেক্টাইল ক্ষেপণাস্ত্র থেকে হামলা হলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশের একটি বিল্ডিং এ আঘাত হানে, যা ইতোমধ্যে নিভে গেছে।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে আপস করা হয়নি এবং কোনো পারমাণবিক চুল্লীকে আঘাত করা হয়নি। তবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যখন সামরিক বাহিনী ঘটনাস্থলের দায়িত্বে থাকে, তখন এই পরিস্থিতির কোনো স্বাভাবিকতা নেই।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক দৃঢ় হবে : প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরো জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আইএইএ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইউক্রেনে ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত, সমস্ত পারমাণবিক স্থাপনার নিরাপত্তা এবং অখণ্ডতা নিশ্চিত করার জন্য একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে।
তিনি তার বক্তব্যের শেষ প্রান্তে এসে বলেন, আইএইএ’র প্রধান অগ্রাধিকার হলো প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং যারা এটি পরিচালনা করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৬০ লাখ ছুঁল
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড নিরাপত্তা কাউন্সিলের এ জরুরি বৈঠকে বলেন, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা ‘বিশ্বের জন্য একটি মারাত্মক হুমকির প্রতিনিধিত্ব করে।
তিনি আরো বলেন, সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় বিশ্ব একটি পারমাণবিক বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে। রুশ আক্রমণ ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এটি ছিলো বেপরোয়া এবং বিপজ্জনক। রাশিয়া ইউক্রেন এবং ইউরোপ জুড়ে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।
আরও পড়ুন: মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মরিচের হাট
বৃটিশ রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড বলেন, এটি প্রথমবার যে একটি রাষ্ট্র একটি চলমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আক্রমণ করেছে। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পারমাণবিক স্থাপনার জন্য বিশেষ সুরক্ষার প্রয়োজন। কিন্তু রাশিয়ার সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো তার প্রতিশ্রতির সাথে কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল তা মিলিয়ে দেখা কঠিন।
আরও পড়ুন: রাজাকারের সন্তানরা সরকারি চাকরি পাবে না
ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস ডি রিভিয়ারও পারমাণবিক নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সকল পারমাণবিক স্থাপনার উপর ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা জন্য রাশিয়াকে অবিলম্বে তার অবৈধ এবং বিপজ্জনক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।
সান নিউজ/ এইচএন