আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উত্তর আফ্রিকার ভূমধ্যসাগরতীরবর্তী দেশ তিউনিসিয়া। এই দেশটি বেতন-ভাতা পেতে দেরিসহ ওষুধ ও খাদ্যশস্য সংকটে পড়েছেন। দেশটির জন্য এটা বড় ধরনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের ইঙ্গিত, যেটিকে হয়তো কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। মিডল ইস্ট অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে তিউনিসের ইত্তাহরির শহরের বাইরে একটি দোকানে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন লেগে থাকছে। যোগান কমে যাওয়ায় দোকানটি এখন আগের চেয়ে কম সময় খোলা থাকছে।
নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যই তিউনিসিয়াকে আমদানি করতে হয় ও দেশে ভর্তুকি দিয়ে সেগুলো বিক্রি করতে হয়। এদিকে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সংবিধানে পরিবর্তন আনতে চান প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। এ নিয়ে দেশটিতে এক ধরনের রাজনৈতিক উত্তেজনা রয়েছে। আর এখন এর ওপর তিউনিসীয়দের জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন এলে তা রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও ঘোলা করবে।
সেখানে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন আহমেদ বিন সালেম নামে একজন ট্যাক্সিচালক। তিনি বললেন, এটাই প্রথম দোকান না যেখানে এসে আমি কিছু কিনতে পারলাম না। গত মাস ধরেই আমাকে সুজি করতে প্রতিদিন বিভিন্ন দোকানে ঘুরতে হয়। আমি দোকানে দোকানে ঘুরি আর হতাশ হই।
আরও পড়ুন: দেশ উন্নত হচ্ছে, মানুষ সাবলম্বী হচ্ছে
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনিক ত্রুটি, শ্রমিক ধর্মঘট, ফটকা ব্যবসায়ী ও বিরোধীদের দুষছেন প্রেসিডেন্ট ও দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা।
গত মাসে প্রেসিডেন্ট সাইদ বলেছিলেন, তারা চায় এ দেশের মানুষ খাদ্য ও ওষুধ সঙ্কটে পড়ুক।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আসলে তহবিল সঙ্কটে ভুগছে তিউনিসিয়া। যার জন্য তারা বিদেশি সাপ্লাইয়ারদের ও দেশে সরকারি কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না।
ইন্টারন্যাশনাল মনেটারি ফান্ডের (আইএমএফ) একটি রেসকিউ প্যাকেজ নিয়ে বেশ কয়েকবারই আলাপ হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বারবারই সে আলাপ থেমে গেছে। তবে গতমাসে এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেছে।
আরও পড়ুন: মিজান-বাছিরের কারাদণ্ড
তিউনিসিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মারৌনি আব্বাসি বলছেন, ভেনেজুয়েরা ও লেবাননের মতোই অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে রয়েছে তিউনিসিয়া।
লতিফ মানসৌরি নামে ৫৫ বছর বয়সী এক শিক্ষক বলেন, এখানে এমন শিক্ষক আছেন যাদের সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবতে হয় সারাটা দিন কিভাবে চলবে।
জানুয়ারিতে শিক্ষকরা এক সপ্তাহ দেরিতে তাদের বেতন পেয়েছেন। কূটনীতিকরা বলছেন, সরকার যদি আইএমএফের সাথে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারে তাহলে সামনে বেতন পেতে আরও দেরি হবে।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, ডিসেম্বর থেকে বন্দরে শস্যের চালান আটকে আছে। এগুলো ছাড়াতে যে টাকার প্রয়োজন সেটা সরকারের নেই। তবে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী ফাদিলা রাভি বলেছেন, শস্যের ওই চালান ছাড়ে দেরি হওয়ার কারণ শ্রকিক ধর্মঘট। আর যে পরিমাণ শস্য মজুদ আছে তা দিয়ে মে মাস পর্যন্ত চলা যাবে।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন চালু হচ্ছে
এছাড়া চিনি ও সুজির মতো আরও যেসব পণ্যে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে সেগুলোরও যোগান কম। তারেক তাহরি নামে একজন পাইকারি বিক্রেতা বলেন, এগুলো এখন পাওয়া যাচ্ছে না। আগে এগুলো সহজেই পাওয়া যেত। কিন্তু এখন বড় একটা সমস্যা চলছে।
এদিকে সরকার ময়দার দাম না বাড়ালেও বেশ কিছু বিক্রেতা বেশি দামে রুটি বিক্রি শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, তারা সরকারের ভর্তুকি দেওয়া মূল্যে কোথাও ময়দা পাচ্ছেন না, আর তাদের বেশি দামে ময়দা কিনতে হচ্ছে।
ফার্মেসিগুলোতে ডায়াবেটিস ও হার্টের অনেক ওষুধও আর পাওয়া যাচ্ছে না।
ফার্মেসিগুলোতে ওষুধ না পাওয়া একজন ক্রেতা জানিয়েছেন, তিনি ফ্রান্সে এক বন্থুকে বলেছেন তার জন্য ওষুধ পাঠাতে। এ পরিস্থিতি সহ্য করা যায় না। আমরা কোন পথে যাচ্ছি? সাইদ আমাদের যে উন্নয়নের গল্প শুনিয়েছিল এটা সেই উন্নয়ন?
তিউনিসিয়ার রাজধানীতে ২৮ লক্ষ লোকের বাস। দেশটির ৪৫% জায়গা সাহারা মরুভূমিতে পড়েছে। দেশটির আয়তন ১.৬৩,৬১০ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের ৯২তম বৃহত্তম দেশ। জনসংখ্যা বড় জোর দেড় কোটি।
সাননিউজ/এমআরএস