ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
আকাশপথে চীনের সম্ভাব্য হামলা রুখতে ভূমি থেকে আকাশমুখী (এসএএম) ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হল লাদাখে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে গত ক’দিনে চীনা বায়ুসেনার সক্রিয়তা দেখেই ওই পদক্ষেপ করা হয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নীরব।
এই তৎপরতার মধ্যেই আজ পূর্ব লাদাখে চুসুল সেক্টরে ফের বৈঠকে বসলেন দু’দেশের শীর্ষ সেনা কর্তারা। ভারতীয় সূত্রের খবর, বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে এই প্রথম স্বীকার করা হল যে, ১৫ জুনের সংঘর্ষে তাদেরও এক কমান্ডিং অফিসারের মৃত্যু হয়েছে।
এত দিন চীন সরকারি ভাবে কোনও মৃত্যুর কথা স্বীকার করেনি। চীনের ৪৩ জন হতাহতের কথা ভারতীয় সেনার কোনও কোনও সূত্রে বলা হয়েছিল। চীনের একাধিক সেনা যে ভারতের হাতে আটক হয়েছিলেন, সে কথাও সামনে এসেছিল। আজ চীনের তরফে পদস্থ সেনা অফিসারের মৃত্যুর কথা মেনে নেওয়া হল প্রথম। পাশাপাশি চীন সরকারের মুখপাত্র বলে পরিচিত ‘গ্লোবাল টাইমস’ সংবাদপত্রে দাবি করা হয়েছে, সংঘর্ষে ভারতের চেয়ে কম সেনা মারা গিয়েছে চীনের। সংখ্যা জানাজানি হলে ভারত চাপে পড়ে যাবে, তাই সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি!
তবে সূত্রের মতে, এ দিনের বৈঠকেও অধিকৃত জমি না ফেরানোর প্রশ্নে অনড় থাকে চীন। জবাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় অস্ত্র ব্যবহারের নীতিতে পরিবর্তন আনার বিষয়টি আজ চীনকে জানিয়ে দেয় ভারত। সীমান্তের পরিস্থিতি ও বাহিনীর পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে আগামিকাল জম্মু-কাশ্মীর ও লে যাওয়ার কথা রয়েছে সেনাপ্রধান এম এম নরবণের।
গত সোমবার রাতে গালওয়ানে সংঘর্ষ হয়েছিল। তার এক সপ্তাহের মাথায় লাদাখে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চুসুল-মলডো সীমান্তে আজ বৈঠকে বসেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরিন্দর সিংহ ও চীনের দক্ষিণ জিংজিয়াং মিলিটারি ডিস্ট্রিক্টের চিফ মেজর জেনারেল লিউ লিন। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয়ে বৈঠক চলে প্রায় ১১ ঘণ্টা। সূত্রের মতে, ভারত জানায়, গত ৪মে-র আগে পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কোনও অনুপ্রবেশ হয়নি। সেই স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। নয়াদিল্লির আশঙ্কা, চীনা সেনা প্যাংগং লেক ও ফিঙ্গার ফোর থেকে এইট এলাকায় যে ভাবে স্থায়ী বাঙ্কার গড়তে শুরু করেছে, তাতে তারা সহজে ফিরে যাওয়ার জন্য আসেনি বলেই মনে হচ্ছে। সেই আশঙ্কা সত্যি করে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নে নীরব থাকে চীন। উল্টে ভারতকে লাদাখ সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর জন্য বৈঠকে চাপ দেওয়া হয়। ভারত পাল্টা জানায়, গালওয়ানের মতো সংঘর্ষের পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে সেনা। যা নিয়ে আপত্তি জানায় লাল ফৌজ।
এ দিকে চীনের ভূখণ্ডে তিব্বতের নগৈরি-সহ একাধিক বায়ু ঘাঁটিতে সক্রিয়তা ও চপারের আনাগোনা দেখে ভারতের তরফে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্রের খবর, রাশিয়ায় সফররত প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এস-৪০০ অ্যান্টি মিসাইল সিস্টেম যাতে দ্রুত ভারতের হাতে আসে, সে বিষয়ে আলোচনা করবেন। সেই সঙ্গে দিল্লিতে আজ সেনা কম্যান্ড্যার্স কনফারেন্স উপলক্ষে সেনাকর্তাদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসেন সেনাপ্রধান এম এম নরবণে। সূত্রের খবর, চীনা সেনার অধিগৃহীত জমি কী ভাবে মুক্ত করা সম্ভব এবং হামলা হলে ঠেকানোর সম্ভাব্য উপায়গুলি নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে। সীমান্তে সড়ক পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ডিভিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকে বসে বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন, সিপিডব্লুডি এবং আইটিবিপি-ও। ভারত-চীন সীমান্তে মোট ৩২টি রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সেখানে।