আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনের সরকারি বাহিনী এবং রাশিয়ান-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দেশটির পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গুলিবিনিময় করেছে। এই ঘটনায় মস্কো ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কা আরও জোরদার হচ্ছে বলে শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। বৃহস্পতিবারও সেখানে গুলিবিনিময়ের অভিযোগ তোলে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
শুক্রবার ভোরে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পেট্রিভস্কে গ্রাম লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করা হয় বলে স্বঘোষিত ডোনেটস্ক পিপলস রিপাবলিক দাবি করেছে বলে রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। যদিও তথাকথিত লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক দাবি করেছে সেখানে মর্টার নিক্ষেপের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।
কিয়েভ এবং বিদ্রোহীরা ডনবাস অঞ্চলে আট বছর ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে। দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে। তবে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ডনবাসে গণহত্যা, গণকবর পাওয়া ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ‘মিথ্যা’ অজুহাতের ভিত্তিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন: ভারতে ৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ড
এদিকে, ইউক্রেনের উত্তর সীমান্তে বেলারুশে এখনো প্রায় ৩০ হাজার রুশ সেনা অবস্থান করছে। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, মস্কোর সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া শেষ হওয়ার পর একজন রুশ সেনাও বেলারুশে অবস্থান করবে না। তবে প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো বৃহস্পতিবার পশ্চিমা নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, প্রয়োজন হলে এবার পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করা হবে। বেলারুশের পরমাণু অস্ত্র নেই। এই হুমকির মধ্য দিয়ে রুশ পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন দেশটির নেতা।
তবে রাশিয়ার নেতাদের সেনা প্রত্যাহার ঘোষণার বাস্তব প্রতিফলন নেই বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এক মার্কিন কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, মস্কোর দাবি পুরোপুরি মিথ্যা। ইউক্রেন সীমান্তের কাছে নতুন করে সাত হাজার সেনা পাঠিয়েছে মস্কো। সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাশিয়া বিশ্বকে বিভ্রান্ত করেছে বলে অভিযোগ করেছে ন্যাটো জোট।
জোটের প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গ বলছেন, রুশ সেনা প্রত্যাহারের কোনো চিহ্নই পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় একই কথা বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের সঙ্গে এক ফোনালাপকালে তিনি বলেন, ‘সেনা প্রত্যাহারের প্রমাণ যৎসামান্যই।’ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ স্ট্রাস বলেছেন, ইউক্রেন সংকট এখনই মেটাতে চায় না রাশিয়া। সমস্যা আরও কয়েক মাস জিইয়ে রাখতে পারে তারা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শিগগিরই পূর্ব-ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন তিনি। সফর শেষে আগামী শনিবার জার্মানির মিউনিখে জি-৭ জরুরি বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে হামলার অজুহাত খুঁজছে রাশিয়া
প্রসঙ্গত, ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন রেখেছে প্রতিবেশী রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলছে যে, যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলা করে বসতে পারে রাশিয়া। একই আশঙ্কা প্রকাশ করছে ওয়াশিংটনের অন্যান্য মিত্র দেশগুলোও। এমনকি হামলার জন্য মিথ্যা অজুহাতও রাশিয়া দাঁড় করাতে পারে বলে পরিষ্কারভাবেই বলে আসছিল পশ্চিমা দেশগুলো।
তবে মস্কো দাবি করেছে, সামরিক মহড়া শেষে ইউক্রেনে সীমান্ত থেকে ঘাঁটিতে ফিরতে শুরু করেছে রুশ সেনারা। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করেছে রাশিয়া।
কিন্তু পশ্চিমা দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, মস্কোর এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা পাননি। বরং গত কয়েকদিনে ইউক্রেন সীমান্তে আরও ৭ হাজার রুশ সেনাকে জড়ো করা হয়েছে।
সান নিউজ/এনকে