আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেন সীমান্তে ক্রমবর্ধমান সংকট নিরসনে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রুশ সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায় দেশটি । ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে এবং সীমান্তে সেনা মোতায়েন বিষয়ে জানাতে মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে এ আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সংবাদ- বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সীমান্তে সেনা মোতায়েন সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও তা উপেক্ষা করেছে রাশিয়া।
ফলে রাশিয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পেতে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বৈঠকে বসার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দিমিত্র কুলেবা জানান, ইউরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থার (ওএসসিই) সদস্যরা নিরাপত্তা ইস্যুতে ভিয়েনা চুক্তিতে সই করেছে। ওই সংস্থার সদস্য রাশিয়াও।
সে জন্য ভিয়েনা চুক্তি অনুসারে ইউক্রেন শুক্রবার রাশিয়ার কাছে সীমান্তে সেনা মোতায়েন বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দাবি করেছে।
তিনি আরও জানান, ‘রাশিয়া যদি ওএসসিই এলাকায় নিরাপত্তা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, তা হলে তাদের অবশ্যই উত্তেজনা নিরসনে সামরিক স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে এবং সবার নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।’
ওই প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, ইউক্রেন সীমান্তে ১ লাখ সেনা মোতায়েন করে কার্যত দেশটির তিন দিক দিয়ে ঘিরে ফেলেছে রাশিয়া।
স্যাটেলাইটের চিত্রে দেখা গেছে, এরই মধ্যে ইউক্রেনের তিন দিকে অর্থাৎ বেলারুশ, ক্রিমিয়া ও পশ্চিম রাশিয়ায় ব্যাপক সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে মস্কো।
তবে দেশটিতে হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়ে আসছে রাশিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পরিকল্পনা করছে। যে কোনো মুহূর্তে রাশিয়া দেশটিতে হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইতিমধ্যে ১২টিরও বেশি দেশ তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ তাদের দূতাবাসকর্মীদেরও সরিয়ে নিয়েছে।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ‘ভীতি’ ছড়ানোর সমালোচনা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পরিকল্পনা করছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
অপরদিকে, রাশিয়া যেকোনো সময় ইউক্রেনে হামলা করতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমন আশঙ্কা থেকেই ইউক্রেনগামী ফ্লাইট বাতিল কিংবা অন্যত্র পাঠাচ্ছে বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান। সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সপ্তাহজুড়ে কূটনৈতিক আলোচনার পরও অগ্রগতি না হওয়ায় রুশ আক্রমণ আসন্ন বলে আশঙ্কা জোরদার হচ্ছে।
পশ্চিমা বিশ্ব দাবি করে আসছে, ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। এমনকি, প্রতিবেশী বেলারুশেও রুশ সেনা পাঠানো হয়েছে মহড়ার জন্য।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেন সীমান্তে উপস্থিত রুশ সেনা সমাবেশ ও সরঞ্জাম হামলার জন্য পর্যাপ্ত। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যেকোনো সময় আক্রমণের নির্দেশ দিতে পারেন।
তবে, ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে রুশ সরকার।
গত শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ডাচ এয়ারলাইন কেএলএম ঘোষণা দিয়েছে যে, পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনে ফ্লাইট বাতিল থাকবে। দেশটির আকাশসীমা নিয়ে নেদারল্যান্ডসের সংবেদনশীলতা চরমে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে পূর্ব ইউক্রেন রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনের একটি যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত করা হয়। এতে ২৯৮ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১৯৮ জনই ছিলেন ডাচ নাগরিক।
রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনীয় চার্টার এয়ারলাইন স্কাইআপ জানিয়েছে, পর্তুগালের মাদেইরা থেকে কিয়েভ অভিমূখী ফ্লাই মলডোবার রাজধানীতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে কোম্পানিটির ভাড়াদাতা প্রতিষ্ঠান ইউক্রেনের আকাশসীমায় ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনগামী ফ্লাইট বাতিল
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র সার্হি নিকিফোরভ এ প্রসঙ্গে জানান, আকাশসীমা বন্ধ করা হয়নি।
অবকাঠামো মন্ত্রীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কয়েকটি এয়ারলাইন্স বীমার বাজারের ওঠানামার কারণে অসুবিধার মুখে পড়ছে।
সান নিউজ/ এইচএন