আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি পরিস্থিতি ২ বছর অতিক্রম করেছে। এখনও জানা নেই, এর শেষ কবে ? এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু দেশ ঘোষণা দিয়েছে, মহামারিকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হবে। এই যুক্তিতে করোনা-বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) সতর্ক থাকতে বলছে সবাইকে। বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জন্য আরো কঠিন সময় আসতে পারে বলেও জানিয়েছে এই সংস্থাটি।
ডাব্লিউএইচও-র প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন জানান, এখনো অনেক পথ হাঁটা বাকি। একটি মার্কিন সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে করোনা অতিমারি নিয়ে চলমান রাজনীতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন সৌম্য।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের মন রাখতে, ভোট-ব্যাঙ্ক বাঁচাতে করোনা-বিধি শিথিল করে দিচ্ছে বহু দেশ। কিন্তু এখনই অতিমারি শেষ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞেরা।
সৌম্য জানান, ‘আমার মনে হয় না, কেউ বলতে পারবেন কবে অতিমারি শেষ হবে। দয়া করে বলবেন না, অতিমারি শেষ হয়ে গেছে। সমস্ত করোনা-বিধি তুলে দেওয়া বোকামি হবে।
অন্তত ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত এই সব বিধি মেনে চলাই উচিত। যেকোনো জায়গায় নতুন ধরন তৈরি হতে পারে। একটু ভুল হলে আবার আমরা সেই গোড়ার জায়গায় চলে যাব। '
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এক-এক করে করোনা-বিধি তুলে দিচ্ছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে মাস্ক পরার বিধিটাও উঠে যাবে।
মার্কিন যুক্তরাজ্যও জানিয়েছে, দু’সপ্তাহের মধ্যে পুরনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে তারাও। এ ধরনের পদক্ষেপে মোটেই খুশি নয় ডব্লিউএইচও। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এখনো দৈনিক সংক্রমণ মাত্রাছাড়া।
২ হাজারের বেশি দৈনিক মৃত্যু হচ্ছে এখনো। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন, যত বেশি সংক্রমণ ঘটবে, তত বেশি নতুন ধরন তৈরি হওয়ার আশঙ্কা। এর মধ্যেই করোনা-বিধি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে টিকার বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন চতুর্থ ডোজ় দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে, আফ্রিকা তখনও টিকার প্রশ্নে অন্ধকারে।
সৌম্য জানিয়েছেন, ৮৫ শতাংশ আফ্রিকান এখননো ১ম ডোজই পাননি। একে টিকাহীন, তার ওপরে করোনা পরীক্ষাও তেমন হচ্ছে না এই মহাদেশে। এই অবস্থায় নতুন ধরন তৈরির আশঙ্কা প্রবল।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে এ ভাইরাসের সঙ্গে বাঁচতেই শিখতে হবে মানুষকে। তবে তার আগে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও বিজ্ঞান-শিক্ষা, এই দুই বিষয়েই সচেতন হতে হবে। সূত্র: আনন্দবাজার।
প্রসঙ্গত, সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ হাজার ৮৬২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৯৮৩ জন।
মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ৮৭ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭৭ জনে।
মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৩৭৯ জনে। এসময়ের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩২ কোটি ৮৬ লাখ ৮২ হাজার ৬৪৪ জন।
আজ শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে বৈশ্বিক পর্যায়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার আপডেট দেওয়া ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনায় আরও ১০৮৬২ মৃত্যু
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশের হুবেই শহরে প্রথম করোনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ভাইরাসটি কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে যায়।
গত বছরের ১১ মার্চ মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।
সান নিউজ/ এইচএন