আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সম্প্রতি ভারতে হিজাব বিতর্ক নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে দেশটির কূটনীতিককে তলব করেছে পাকিস্তান সরকার।
গত বুধবার ( ৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। খবর দ্যা হিন্দু।
এতে বলা হয়েছে, ইসলামাবাদে ভারতের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ারকে ডেকে পাঠিয়ে কর্নাটকের সাম্প্রতিক হিজাব-নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করা হয়েছে।
এই ইস্যুতে সরব হয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি এবং দেশটির তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ফাওয়াদ হুসেন।
অন্যদিকে নয়াদিল্লিতে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি সাংবাদিকদের জানান, পাকিস্তানের ভারতকে জ্ঞান দেওয়া উচিত নয়। এখানে সব ধর্ম নিয়ে মিলেমিশে চলা হয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের স্কুল-কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পড়া নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্ক ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
রাজ্যটিতে ৩ দিনের জন্য সকল স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হলেও গত মঙ্গলবার ( ৮ ফেব্রুয়ারি) সেখানকার একটি কলেজে হিন্দু-মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে মুখ খুলেছেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও।
তিনি জানিয়েছেন, নারী কোন কাপড় পরবে না পরবে সেটি ঠিক করার অধিকার সংশ্লিষ্ট নারীর এবং ভারতীয় সংবিধানেও তাদের সেই অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক টুইট বার্তায় প্রিয়াঙ্কা গন্ধী একথা জানান বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
টুইট বার্তায় প্রিয়াঙ্কা গান্ধী লিখেছেন, ‘বিকিনি হোক কিংবা ঘোমটা, জিন্স বা হিজাব যেটাই হোক, তিনি কী পরতে চান তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে একজন নারীর।
নারীর এই অধিকারটি ভারতীয় সংবিধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। আর তাই নারীদের হয়রানি করা বন্ধ করুন।’
এই টুইটে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী #লাড়কি হু, লড়সাকতি হু (আমি নারী, আমি লড়তে জানি) হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন।
প্রসঙ্গত, এটি মূলত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের মূল স্লোগান। মোট ৭ দফায় রাজ্যটির বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গত সপ্তাহে ক্লাসরুম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার সমর্থনে মুখ খুলেছিলেন কংগ্রেসের আরেক শীর্ষস্থানীয় নেতা রাহুল গান্ধী।
সেসময় টুইটারে এক বার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘হিজাবে বিধিনিষেধ দিয়ে কার্যত ছাত্রীদের পড়ালেখায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
আর এর মাধ্যমে ভারতের মেয়েদের ভবিষ্যৎ আমরা নষ্ট করছি। মা স্বরস্বতি সবাইকে জ্ঞান দেন। তিনি কোনো ভেদাভেদ করেন না।’
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) হিজাব ইস্যুতে কর্ণাটকের একটি কলেজে হিন্দু-মুসলিম শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এছাড়া ক্যামেরায় ধরা পড়া শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এই ভিডিওতে দেখা যায়, কর্ণাটকের একটি কলেজ চত্বরে হিজাব পরা এক ছাত্রী হাঁটছেন। এ সময় গেরুয়া ওড়না পরা একদল তরুণ তাকে ঘিরে হিজাববিরোধী স্লোগান দেন এবং হেনস্তা করেন।
শত শত তরুণের সামনে একাই প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছে কর্ণাটকের মুসকান খান নামের ওই মুসলিম ছাত্রী। আর এই ঘটনা ঘটেছে কর্ণাটকের মান্দিয়া প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণী স্কুটার পার্কিংয়ে রেখে কলেজ ভবনের দিকে হাঁটছে। এ সময় গেরুয়া ওড়না পরা একদল তরুণ ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেয় এবং তার দিকে এগিয়ে যায়। পাল্টা ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেওয়ার সময় এই তরুণীকে ভীত দেখা যায়নি।
ওই সময় হাত উপরে তুলে আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে দেখা যায় তাকে। পরে কলেজের অধ্যক্ষ এবং অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে সরিয়ে নেন।
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে কর্ণাটকের বিভিন্ন স্কুল কলেজে একদিকে হিজাব পরে ক্লাস করার অনুমতির দাবিতে আন্দোলন করছে মুসলিম ছাত্রীরা। অন্যদিকে হিন্দু শিক্ষার্থীরা গেরুয়া ওড়না পরে হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, কর্ণাটকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে গত মাসে উদুপি জেলার সরকারি বালিকা পিইউ কলেজে ছয়জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসতে বাধ্য করার পর।
সেই সময় কলেজ প্রশাসন জানায়, ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব এবং ওই ছাত্রীরা কলেজের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। ছাত্রীদের ক্লাসে হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী ও তাদের ছাত্র সংগঠন।
আরও পড়ুন: সিলেটে শিক্ষামন্ত্রী
উদুপির এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের মান্দিয়া এবং শিভামোগগা এলাকায়। সেখানকার কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব নিষিদ্ধ করে। যদিও আইনে হিজাব পরে মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসে আসতে কোনও বাধা নেই।
সান নিউজ/ এইচএন