প্রশ্নের, মুখে, মোদি, সীমান্ত, লঙ্ঘন, কে, করেছিল,?,
আন্তর্জাতিক

প্রশ্নের মুখে মোদি, সীমান্ত লঙ্ঘন কে করেছিল?

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:

কাশ্মিরের লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত ও ১০ সেনা আটকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বড় মুখ করেই বললেন ভারতের সীমানায় কোনো চীনা সৈন্য অনুপ্রবেশ করেনি।

তাঁর এমন মন্তব্যের পরপরই ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। উঠতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন। সবার জানার আগ্রহ, প্রকৃত ঘটনাটি তাহলে কী?

প্রশ্ন উঠছে, ভারত ও চীনের বিতর্কিত ওই সীমানায় চার দশক পরে ঘটা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের নেপথ্যে উসকানি ছিল কাদের? মোদির কথার রেশ ধরেই এসব প্রশ্ন আরও ডালপালা ছড়াচ্ছে। সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি উঠছে তা হলো—চীনা সেনারা যদি অনুপ্রবেশ না করে থাকে তবে কি উল্টো ঘটনা ঘটেছিল। চীন কিন্তু সে দাবিই করে বসেছে।

ভারতের স্ক্রল ডটইনের এক প্রতিবেদনে মোদির বক্তব্য ঘিরে তৈরি হওয়া এ রকম পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে। যার মূলে রয়েছে, সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখা কারা আগে পেরোল?

নরেন্দ্র মোদি তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের সীমান্তে কেউ অনুপ্রবেশ করেনি, বর্তমানে কেউ অনুপ্রবেশ করছেন না, বা কোনো ভারতীয় সেনাছাউনি বা পোস্ট অন্য কারও হাতে নেই। লাদাখে আমাদের ২০ সেনা নিহত হয়েছেন। কিন্তু যাঁরা আমাদের ভারত মায়ের প্রতি চোখ তুলেছেন তাঁদের উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।’

অবশ্য, সরকারি বিবৃতি প্রকাশের সময় মোদির মন্তব্যের একটি অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া অংশটিতে বলা ছিল, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে আমাদের অঞ্চলের অভ্যন্তরে কেউ অনুপ্রবেশ করেনি বা আমাদের কোনো পোস্ট কেউ দখল করেনি।

মোদির মন্তব্যের পরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষত টুইটারে অনেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন করছেন। তাঁদের মধ্যে ‘হিন্দু’র ন্যাশনাল ও ডিপ্লোমেটিক এডিটর সুহাসিনী হায়দার, লেখক ব্রহ্মা চেলানি, ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের’ উপসম্পাদক সুশান্ত সিং রয়েছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, এখন প্রশ্ন হলো—মোদির কথা যদি ঠিক হয়, তবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি ভুল বা মিথ্যা বলেছে?

গত বুধবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং হির এক ফোনালাপের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ৬ জুন জ্যেষ্ঠ সেনা কমান্ডারদের মধ্যে বৈঠকের পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলওসি) বরাবর উত্তেজনা নিরসন এবং সংঘাত এড়ানোর বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছিল। গত সপ্তাহের এই সমঝোতা বাস্তবায়নে সেখানকার কমান্ডাররা নিয়মিত বৈঠক করছিলেন। কিছু উন্নতিও ঘটেছিল। চীনা পক্ষ সীমান্তরেখার পাশে গালওয়ান উপত্যকায় একটি কাঠামো তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। সেখান থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত এবং চীনা সেনারা পরিকল্পিতভাবে সংঘর্ষ বাধিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে।

অর্থাৎ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে চীনা সেনাদের গালওয়ান উপত্যকায় অবকাঠামো তৈরির প্রচেষ্টার কথা বলা আছে। কিন্তু মোদি তাঁর বক্তব্যে সে কথা স্বীকার করেননি।

মোদির মন্তব্যের পর আরেকটি বড় প্রশ্ন উঠছে ২০ সেনার মৃত্যুকে ঘিরে। লড়াইসংক্রান্ত বেশ কিছু প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চীনা সেনারা নৃশংস অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। চীন ও ভারতীয় সেনাদের সংঘর্ষে রডের ওপর পেরেক বসানো এক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। ওই সব প্রতিবেদন অনুসারেই ধারণা করা যায়, সামরিক বাহিনীর মধ্যে চুক্তি হওয়ার পরও সেনারা ভারতীয় সীমান্তের পাশের তাঁবু এবং অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তবে, এখন মোদি দাবি করছেন, চীনা সৈন্যরা অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। তাহলে ভারতীয় সেনাদের মৃত্যুর ব্যাখ্যা কী? সংঘর্ষ বাধল কী নিয়ে?

ভারতীয় সেনাদের অবস্থান ঘিরে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার এস জয়শঙ্কর এ নিয়ে এক টুইট করেন। তাঁর টুইটের পরও প্রশ্নের বান ডাকা শুরু হয়েছে। জয়শঙ্কর দাবি করেছেন, নিহত ও আহত সেনারা এবং যাঁরা চীনের হাতে আটক হয়েছিলেন তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র বহন করছিলেন। অথচ চুক্তি অনুযায়ী, ওই অঞ্চলে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নিষেধ।

ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে জয়শঙ্করকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, চীনা সেনাবাহিনীর কৌশলী অস্ত্রের সঙ্গে খালি হাতে লড়েছিলেন ভারতীয় সেনারা। অস্ত্র থাকলেও তাঁরা তাঁর প্রয়োগ করেননি। ভারত সরকারের এই অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। সেনাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও প্রাণঘাতী হামলায় তাঁরা চুপচাপ ছিলেন! মোদির সরকারের পক্ষে বিষয়টি স্পষ্ট করা হচ্ছে না বলে অনেকেই সমালোচনা করছেন।

ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব কি গোয়েন্দা সতর্কবার্তা পায়নি? এমন প্রশ্নও বাদ যাচ্ছে না। আক্রমণের আগে সীমান্তের অপর পাশে চীনা সেনা মোতায়েনের বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্য থাকার কথা। মে মাসের শুরু থেকেই চীনা সেনা জমায়েতের কথা বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসেছে। তবে কি ভারতীয় পক্ষ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রস্তুত ছিল না? মোদির বক্তব্য শুনে মনে হবে, ভারতীয় পক্ষ তাদের ১০ সেনা আটক হওয়ার বিষয়টি নিয়েও যথাযথ জ্ঞাত ছিল না। সেনা ধরা পড়া নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট নয়। অনুপ্রবেশের ঘটনা না ঘটলে সেনা ধরা পড়ার ব্যাখ্যা কী? ঘটনা যদি শুধু লাদাখেই সীমাবদ্ধ থাকত তা হলে কথা থাকত না। সীমান্তের আরও অনেক জায়গায় এ ধরনের ঘটনা নিয়ে সরকারের বক্তব্য পাল্টানোর ঘটনা রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—এসব বিষয় কি ভারত সরকার বা মোদি পরিষ্কার করে বলতে পারবেন?

এদিকে, গতকালই চীন সরকারের এক বিবৃতিতে সব দোষ ভারতের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। ভারতের চীনা দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় সেনারা ৬ জুনের চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল এবং সহিংসভাবে চীনা সেনাদের ওপর আক্রমণ করেছিল।

ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র অনলাইনে বলা হয়েছে, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুসারে, ভারতীয় পক্ষ ৬ জুন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা গালওয়ান নদীর মোহনা পেরিয়ে টহল দেওয়ার ও সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে পারবে না এবং উভয় পক্ষ বৈঠকের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেবে। তবে দুঃখজনকভাবে, ১৫ জুন সন্ধ্যায়, কমান্ডার-স্তরের বৈঠকে চুক্তির লঙ্ঘন করে ভারতের সম্মুখ-সামরিক বাহিনী। যখন গালওয়ান উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাচ্ছন্দ্যজনক ছিল তখন তারাই ইচ্ছাকৃত উসকানির জন্য আবার এলএসি পার হয়ে গেল এবং আলোচনার জন্য সেখানে যাওয়া চীনা কর্মকর্তা ও সৈন্যদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালিয়েছিল। এভাবে মারাত্মক শারীরিক সংঘর্ষ সৃষ্টি এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে।’

সান নিউজ/ আরএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সংহতি জানালো মুক্তিজোট

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জ...

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে লক্ষ্মীপুরে হরতাল অবরোধ

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান ধ্বংসযজ্ঞ...

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলনে কৃষকরা খুশি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব মিষ্টি কুমড়া যাচ্ছে দেশে...

টিভিতে আজকের খেলা

প্রতিদিনের মতো আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) বেশ কিছু খেলা প্রচারিত হবে টেলিভিশনের পর্...

ইসরায়েল নিশ্চিহ্নে হামাস ইরানের কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিল!

ইরান ও হামাস নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ইসরায়েলে...

নীলফামারীতে বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস অনুষ্ঠিত

‘সাহসী ও দায়িত্বশীল আগামীর প্রজন্ম’ প্...

বগুড়ায় খুন করে হাসপাতালে রেখে গেল লাশ

বগুড়ার শেরপুরে পরকীয়ার জেরে কাবিল হোসেন (৪০) নামের...

ভালুকায় মুখোশধারী নারী নেতৃত্বে সশস্ত্র ডাকাতি

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাচিনা গ্রামে এক ভয়াবহ ড...

দেশে বিনিয়োগ সহজ করার লক্ষ্যে কাজ করেছি: প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এত অনুকূল পরিবেশ এর আগে কখনো ছিল না বলে মন্তব্য করেছ...

'বিমসটেককে গতিশীল করতে চান প্রধান উপদেষ্টা'

আগামী দুই বছরে চেয়ারম্যান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিমসটেককে একটি গতিশীল প্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা