আন্তর্জাতিক

আমাদের সীমান্তে চীনারা ঢোকেনি: মোদী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

‘‘ওখানে আমাদের সীমান্ত পেরিয়ে কেউ ঢুকে আসেনি। ওখানে আমাদের এলাকায় কেউ ঢুকেও বসে নেই।’’

‘ওখানে’ অর্থাৎ লাদাখে। ‘কেউ’ অর্থাৎ চীনের সেনাবাহিনী।

লাদাখে চীনের সেনার হাতে ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যুর পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ সর্বদলীয় বৈঠকে চীন বা চীনের সেনার নাম সরাসরি না করেই দাবি করলেন, লাদাখে কেউ ভারতের এলাকাতে ঢোকেনি। কেউ ভারতের এলাকায় ঢুকে বসেও নেই। এবং চীনের নাম না করেই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘সামরিক বাহিনীকে যে কোন সময় হামলার নির্দেশ দেওয়া আছে’’ নামের বদলে সর্বনাম ব্যবহার করেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের কোনও সেনা চৌকিও অন্য কারও দখলে নেই।’’

শুক্রবার সন্ধ্যায় সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর এই দাবির পরে বিরোধী শিবির এবং প্রাক্তন সেনাকর্তাদের একাংশের প্রশ্ন, চীনের সেনা ভারতের এলাকায় না ঢুকলে কী ভাবে ২০ জন জওয়ানের মৃত্যু হল? কী ভাবে ৭৬ জন আহত হলেন? ভারতের ১০ জন জওয়ানকেই বা চীন কী ভাবে আটকে রাখল? সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ‘‘তা হলে তো কোনও সংঘাতই নেই! আমাদের সাহসী যোদ্ধারা শহিদ হলেন কী করে? সর্বদল বৈঠকই বা ডাকা হল কেন?’

বিরোধীরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদীর কথার সঙ্গে তাঁর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৃহস্পতিবারের বিবৃতিই মিলছে না। ১৫ জুন রাতে গালওয়ান উপত্যকায় দু’দেশের জওয়ানদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছিলেন, ‘‘আমাদের কাছে স্পষ্ট যে আমাদের যাবতীয় কার্যকলাপ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতের দিকেই ঘটেছিল।’’ যার অর্থ, চীনই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের দিকে ঢুকে এসেছিল।

মন্ত্রকের বিবৃতিতে এ-ও বলা হয়েছিল, ‘চীন গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা মানবে, এই ঐকমত্য থেকে সরে এসেছিল। চীন একতরফা স্থিতাবস্থা বদলাতে চাইছিল বলেই ১৫ জুন হিংসাত্মক সংঘর্ষ ঘটে। চীন নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতের দিকে কাঠামো তৈরির চেষ্টা করায় ভারত বাধা দেয়।’ বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, চীন যে শুধু গালওয়ান উপত্যকা এবং প্যাগং হ্রদ এলাকায় ভারতের ভূখণ্ড দখল করে বসে রয়েছে, তা নয়। ওটা তাদেরই এলাকা বলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

কিন্তু চীন ভারতের এলাকায় বসে নেই বলে প্রধানমন্ত্রীর দাবির পরে বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, তা হলে কি মোদী মেনে নিচ্ছেন, চীনের সেনা গালওয়ানে যেখানে রয়েছে, সেটা চিনেরই এলাকা? বস্তুত এ দিনও চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দাবি করেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে যে এলাকা চীনের হাতে রয়েছে গালওয়ান উপত্যকা সেখানেই।

লাদাখ নিয়ে প্রথম থেকেই বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, চীনের সেনা ভারতের এলাকা দখল করে বসে থাকলেও মোদী সরকার তা অস্বীকার করছে। গোটা দেশকে অন্ধকারে রেখেছে। আজ সর্বদলীয় বৈঠকেও কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী বলেছেন, গত ৫ মে লাদাখে চীনা অনুপ্রবেশের খবর পাওয়ার পরেই সরকারের সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা উচিত ছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আজ বার্তা দিয়েছেন, চীন স্বৈরতান্ত্রিক দেশ হলেও সরকারের সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা উচিত ছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আজ বার্তা দিয়েছেন, চীন স্বৈরতান্ত্রিক দেশ হলেও ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে সরকারকে।

আজ বৈঠকের শুরুতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান। কিন্তু সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে লাদাখে কী ঘটেছে, তার কোনও তথ্য মেলেনি। সনিয়া বৈঠকে কড়া ভাষায় প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এখনও আমরা অনেক বিষয়ে অন্ধকারে। চীনের সেনা কবে লাদাখে ঢুকেছিল? কবে তা সরকার জানতে পারে? ৫ মে না তার আগে? সরকার কি সীমান্তের স্যাটেলাইট ছবি নিয়মিত পায় না? গুপ্তচর সংস্থা কি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু জানায়নি? সেনা গোয়েন্দা সতর্ক করেনি? সরকার কি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল বলে মনে করে?’’

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁর জবাবি বক্তৃতায় বলেন, ‘‘আমি আশ্বস্ত করছি, সেনা সীমান্তের সুরক্ষায় সক্ষম। আমাদের কাছে এখন সেই ক্ষমতা রয়েছে, যে এক ইঞ্চি জমির দিকে কেউ চোখ তুলেও তাকায় না।’’ লাদাখের জওয়ানদের মৃত্যু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে মোদী বলেছিলেন, জওয়ানরা মারতে মারতে মরেছেন। আজ তিনি বলেন, ‘‘লাদাখে আমাদের ২০ জন সাহসী শহিদ হয়েছেন। কিন্তু যারা ভারতমাতাকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল, তাদের উচিত শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন।’’

মোদী বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিকাঠামো তৈরি, নজরদারি বৃদ্ধির ফলেই বিবাদ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আগে যাদের কেউ কোনও প্রশ্ন করত না, কেউ বাধা দিত না, এখন আমাদের জওয়ান প্রতি পদে তাদের বাধা দিচ্ছে। বাধা দিলেও সংঘাত বাড়ে।’’

সরকারি সূত্রের দাবি, মোদী সরকার যে ভাবে পরিস্থিতি সামলাচ্ছে, অধিকাংশ দলের নেতাই আজ তাতে আস্থা জানান। সকলেই সরকারের সঙ্গে এককাট্টা থাকার বার্তা দেন। সরকার পক্ষের মতে, কংগ্রেস অন্য দলের নেতাদের সরকারের বিরুদ্ধে খেপানোর চেষ্টা করলেও কে চন্দ্রশেখর রাও, বিজু জনতা দল, সিকিম ক্রান্তি মোর্চা কংগ্রেসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। গত দু’দিন ধরে রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলছিলেন, সেনার হাতে কেন অস্ত্র ছিল না। সরকারি সূত্রের দাবি, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারই আজ বলেছেন, সীমান্তে সেনার হাতে অস্ত্র থাকা না থাকা আন্তর্জাতিক চুক্তির উপর নির্ভর করে। মায়াবতী বলেছেন, এখন রাজনীতির সময় নয়। বাণিজ্য, লগ্নিতে প্রয়োজন মাফিক পদক্ষেপ করে চিনের মোকাবিলা করতে হবে। ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিনও প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিকে স্বাগত জানান। সিপিআইয়ের ডি রাজা বলেন, আমেরিকা ভারতকে যাতে নিজের ছোট শরিক না বানিয়ে ফেলে, তা দেখতে হবে।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সালমান শাহ’র জন্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের...

দেশে তাপপ্রবাহের আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের তিন বিভাগের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর...

বিদ্যুৎপৃষ্টে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির মৃত্যু

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সেচ দিয়ে বন্যার পান...

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি সপ্তাহের একেক দিন বন্ধ থাকে রাজধানীর...

খাগড়াছড়ির পর রাঙামাটিতেও সংঘাত

জেলা প্রতিনিধি: খাগড়াছড়িতে সহিংসতার উত্তাপ ছড়িয়েছে পাশের জেল...

কারাগারে গেলেন মান্নান

জেলা প্রতিনিধি: আ’লীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এ...

মা হচ্ছেন সানা সৈয়দ

বিনোদন ডেস্ক: বিয়ের ৩ বছর পর মা হতে চলেছেন ‘কুণ্ডলী ভা...

আইন নিজের হাতে তুলে নিলেই ব্যবস্থা 

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার মতো ন...

ডিআইজি মশিউর গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি: বাংলাদেশ পুলিশের...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা