আন্তর্জাতিক

মোদীকে প্রশ্নবাণ ছুঁড়লেও দেশের ঐক্যে অটল সবাই

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:

দেশজোড়া রাজনৈতিক ঐক্যের সুর নিয়ে শেষ হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা সর্বদলীয় বৈঠক। বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারকে একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করালেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। চীন যে এত বড় সৈন্য সমাবেশ করছে, সরকার কি সে খবর পায়নি? উপগ্রহ চিত্রে কি নজর রাখা হয়নি? প্রশ্ন করেন তিনি।

পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত বিরোধীদের অবহিত করার অনুরোধও প্রধানমন্ত্রীকে জানান সনিয়া। তবে চীনকে যোগ্য জবাব দেওয়ার প্রশ্নে সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জোগানোর বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একনায়কতান্ত্রিক চীনের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে আমাদের সবাইকে এক হতে হবে, মন্তব্য তার। বামেরা অবশ্য আমেরিকার জোটে যোগ না দেওয়ার এবং পঞ্চশীল নীতি না ভোলার পরামর্শ দিয়েছেন।

২০টি দলকে নিয়ে এ দিন বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। শুরুতেই লাদাখের পরিস্থিতি তথা গলওয়ানের ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করান প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। ‘‘কবে চীনা বাহিনী লাদাখে আমাদের এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছিল, ৫ মে, নাকি তার আগে? সরকার কি সীমান্ত এলাকার উপগ্রহ চিত্রের উপর নিয়মিত নজর রাখেনি? এলএসি বরাবর কোনও অস্বাভাবিক কার্যকলাপের খবর কি আমাদের গোয়েন্দারা দেননি? ভারতীয় এলাকায় হোক বা চীনের দিকে, এলএসিতে বড় সৈন্য সমাবেশ যে চীন করেছে, তা কি আমাদের সামরিক গোয়েন্দারা সতর্ক করেননি? সরকার কী মনে করছে, গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল?’’— শুক্রবারের বৈঠকে মূলত এই প্রশ্নগুলোই তোলেন সনিয়া গান্ধী।

উত্তর সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার জন্য ‘মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর’ নামে যে বাহিনী গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল, সেই বাহিনী এখন কী অবস্থায়? তা-ও কংগ্রেস সভানেত্রী জানতে চান। লাদাখের পরিস্থিতি সম্পর্কে এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে বিরোধীদের অবহিত করা হোক— এমন দাবিও করেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণে অবশ্য পুরোপুরিই ঐক্যের আহ্বান শোনা গিয়েছে এ দিন। তিনি বলেন, ‘‘চীনে গণতন্ত্র নেই, সেখানে একনায়কতন্ত্র চলে। তারা যা খুশি করতে পারে। কিন্তু আমাদেরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’’ অর্থাৎ গণতন্ত্র না থাকা বা একদলীয় শাসন থাকার সুবাদে চিনের সরকারকে যে কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না, সে কথাই এ দিনের বৈঠকে মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গণতন্ত্র থাকার কারণে আমাদের দেশের সরকারের অনেক বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং সেই কারণে আপাতত বিভেদ ভুলে সবাইকে সরকারের পাশে থাকতে হবে— এই বার্তাই তিনি দিতে চেয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এক হয়ে কথা বলুন, এক হয়ে ভাবুন, এক হয়ে কাজ করুন। আমরা দৃঢ় ভাবে সরকারের পাশে রয়েছি।’’

চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ভাবে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সামরিক পদক্ষেপই বা কী ভাবে করা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর জন্যই এই সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্যিক হোক বা সামরিক, সরকারের যে কোনও পদক্ষেপকে সমর্থনের কথা বলেছে অধিকাংশ দলই। ভারতের রেল, টেলিকম এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে চীনকে কোনও ভাবে ঢুকতে না দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তাতে প্রাথমিক ভাবে ভারতের কিছু সমস্যা হতে পারে, কিন্তু সেই সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে, চীনকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না— এমনই কঠোর অবস্থানের পক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন প্রশ্ন করেছেন।

গলওয়ানের ঘটনার পর থেকে বার বার প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় বাহিনী নিরস্ত্র ভাবে সীমান্তে গিয়েছিল কি না? যদি নিরস্ত্র ভাবে গিয়ে না থাকে, তা হলে আক্রান্ত হয়েও বাহিনী গুলি চালাল না কেন? এই প্রশ্নও তোলা হয়েছে কংগ্রেস-সহ বেশ কয়েকটি দলের তরফ থেকে। তবে কংগ্রেসের শরিক দল এনসিপি এ দিন অন্য সুরে কথা বলেছে। দলের প্রধান তথা দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শরদ পওয়ার বলেছেন, বাহিনী অস্ত্র নিয়ে সীমান্তে যাবে কি না, তা নির্ভর করে নানা আন্তর্জাতিক চুক্তির উপরে। সেই চুক্তিগুলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেই হয় বলে পওয়ার মন্তব্য করেছেন।

তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী তথা টিআরএস প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাও এ দিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাশ্মীর নীতির প্রশংসা করেছেন। কাশ্মীর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট অবস্থান এবং আত্মনির্ভর ভারত গড়ার আহ্বানই চিনের ক্রোধের কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চার প্রধান প্রেম সিংহ তামাং বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে। অতীতেও যখনই জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ আর মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা এনপিপি প্রধান কনরাড সাংমা উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ও মায়ানমারের উপরে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে।

সিপিআই নেতা ডি রাজা সতর্ক করেছেন সরকারকে। চিনের সঙ্গে সঙ্ঘাতে যেতে গিয়ে যেন আমেরিকার জোটে যোগ না দেয় ভারত, পরামর্শ তাঁর। আর সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জোর দিয়েছেন পঞ্চশীল নীতির উপরে। ওই নীতির ভিত্তিতেই চিনের সঙ্গে সুসম্পর্কের উপরে জোর দিয়ে এসেছে অতীতের বিভিন্ন সরকার। এ দিনের বৈঠকে ইয়েচুরি ওই নীতিকে গুরুত্ব দেওয়ার উপরেই জোর দেন।

এর আগে বিকেল ৫টায় সর্বদলীয় বৈঠক শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০টি দলের অংশগ্রহণে ভিডিও কনফারেন্সেই হয়েছে বৈঠক। তবে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল আমন্ত্রণ না পাওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে ।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সালমান শাহ’র জন্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের...

দেশে তাপপ্রবাহের আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের তিন বিভাগের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর...

বিদ্যুৎপৃষ্টে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির মৃত্যু

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সেচ দিয়ে বন্যার পান...

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি সপ্তাহের একেক দিন বন্ধ থাকে রাজধানীর...

খাগড়াছড়ির পর রাঙামাটিতেও সংঘাত

জেলা প্রতিনিধি: খাগড়াছড়িতে সহিংসতার উত্তাপ ছড়িয়েছে পাশের জেল...

কারাগারে গেলেন মান্নান

জেলা প্রতিনিধি: আ’লীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এ...

মা হচ্ছেন সানা সৈয়দ

বিনোদন ডেস্ক: বিয়ের ৩ বছর পর মা হতে চলেছেন ‘কুণ্ডলী ভা...

আইন নিজের হাতে তুলে নিলেই ব্যবস্থা 

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার মতো ন...

ডিআইজি মশিউর গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি: বাংলাদেশ পুলিশের...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা