ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
প্রতি রোববার ছেলের ফোনের জন্য অপেক্ষা করত গোটা পরিবার। কিন্তু গত রোববার ফোনটা আসেনি। তার বদলে ফোনটা এল মঙ্গলবার (১৬ জুন) বিকেলে। যা বয়ে আনলো ছেলের মৃত্যু সংবাদ।
বীরভূম জেলার মহম্মদবাজারের বেলগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সুভাষ ওরাঁও। ওই এলাকার আরও পাঁচ জনের মতোই চাষবাস করে দিন চলে তার। কিন্তু ছেলে রাজেশ চাষবাস করে বাবার মতো জীবন কাটাতে চাননি। প্রথম থেকেই নেশা ছিল অন্য কিছু করার। কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় সুযোগটা পেয়ে যান রাজেশ। যোগ দেন ভারতীয় সেনায়। ২০১৫ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই জম্মু কাশ্মীর লাদাখ এলাকাতেই পর পর পোস্টিং হয়েছে তার।
ছুটিতে বাড়িতে এলেই রাজেশ গল্প করতেন জম্মু-কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অপারেশনের। লাদাখের কথা, চীন সীমান্তের কথা। শেষ বার বাড়িতে এসেছিলেন গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে। আর তাই বোধ হয় রাজেশের বাবা-মা শুরু থেকেই মন থেকে মেনে নিয়েছিলেন ছেলের জীবনের অনিশ্চয়তার কথাও। তাই বুধবার তাদের চোখে মুখে সন্তান হারানোর বেদনা থাকলেও কোথাও যেন গোটা শরীরে একটা কাঠিন্য। প্রায় শয্যাশায়ী সুভাষ বলেন, “নিজের সন্তান হারিয়েছি। সেই দুঃখ তো ভোলার নয়। কিন্তু তার পরও এটুকু মনে শান্তি, আমার ছেলে লড়াই করে মরেছে।”
ছেলে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরেই সুভাষের মেটে বাড়ি ধীরে ধীরে একতলা থেকে পাকা হয়েছে। সেই সাদামাটা পাকা বাড়ির দালানে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন রাজেশের মা। জ্ঞান ফিরলে, তার মনে পড়ে যাচ্ছে আগের সপ্তাহের কথা। যে দিন শেষ বার ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। সেই দিনই রাজেশ বাড়িতে জানিয়েছিলেন, পরের সপ্তাহে ফোন করতে পারবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। বলেছিলেন, পরিস্থিতি ভাল নয়। কথাটা যে এ ভাবে মিলে যাবে, স্বপ্নেও ভাবেননি রাজেশের মা। সব হারিয়ে তার একটাই দাবি, “ছেলের হত্যাকারীদের সমুচিত জবাব দিক মোদী সরকার।”
চাকরির শুরু থেকেই হার্ড পোস্টিং নিয়েছিলেন রাজেশ। এই বছরটা কাটলেই, জম্মু-কাশ্মীর বা লাদাখের বদলে অন্য কোথাও পোস্টিং হতো রাজেশের। বাড়ি থেকে তাই তোড়জোড় চলছিল রাজেশের বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু স্কুলপড়ুয়া বোনের কলেজের পাঠ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজে বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না রাজেশ। সেই বোনের কথায়, “গতকাল সকালে টিভিতে যখনই দেখলাম দাদার ব্যাটালিয়ানে তিন জন মারা গিয়েছেন, তখন থেকেই যোগাযোগের চেষ্টা করছিলাম।”
তিনি যোগাযোগ করতে পারেননি। আর তার পরই মঙ্গলবার বিকেলে ফোনটা আসে লেহ-এর সামরিক হাসপাতাল থেকে। প্রথমে জানানো হয় গুরুতর জখম রাজেশ। তার খানিক পরে ফের ফোন আসে। জানানো হয় শহীদ হয়েছেন রাজেশ ওরাঁও।চোখের জল মুছে সুভাষ বলে ওঠেন, “সন্তান হারানোর বেদনা কিছুটা হলেও ভুলতে পারব যদি সরকার পাল্টা জবাব দেয়।”
সেনা সূত্রে খবর, বুধবার সন্ধ্যাতেই রাজেশের দেহ পৌঁছবে মহম্মদবাজারের বেলগড়িয়া গ্রামে।