আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডান হাত, তথা সবচেয়ে কাছের লোক হিসাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু সেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এবার অমিত শাহের দূরত্ব বাড়ছে!
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মেঘালয়ের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের বিতর্কিত মন্তব্যের পরে কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহের বেশি। এখনও এ নিয়ে মুখে কুলুপ বিজেপি নেতৃত্বের। বিজেপি নেতৃত্ব নীরব থেকে বিষয়টি জনমানস থেকে মুছে দেওয়ার কৌশল নেওয়ায় বিরোধী শিবির বলছে, আসলে সত্য কথাই বলেছিলেন রাজ্যপাল সত্যপাল। যে কারণে চুপ করে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
অনেকের মতে, নিজের ব্যাটন শাহের হাতেই ছেড়ে যাওয়ার পক্ষপাতী মোদী। কিন্তু দ্বিতীয় বার বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ছোট ছোট মতপার্থক্য তৈরি হওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল রাজনীতির জগতে। যা সম্প্রতি বিস্ফোরণের আকার নেয় নতুন বছরের গোড়ায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ২ জানুয়ারি হরিয়ানার কৃষক সমাজের একটি অনুষ্ঠানে সত্যপাল দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি কৃষকদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ মিনিটের মধ্যে তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতপার্থক্য তৈরি হয়।
সত্যপালের মতে, কথোপকথনে তার প্রধানমন্ত্রীকে দাম্ভিক বলে মনে হয়েছিল। পাঁচ মিনিট বাক্য বিনিময়ের পরে প্রধানমন্ত্রী সত্যপালকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দেন।
এর পরেই বোমা ফাটান সত্যপাল। দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কী আলোচনা হয়েছে, তিনি তা শাহকে জানান। যার উত্তরে শাহ বলেন, সত্যপাল, লোকে এঁর বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পাইয়ে দিয়েছে। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। দেখা সাক্ষাৎ করতে থাকো। কোনও না কোনও দিন তিনি ঠিক বুঝতে পারবেন।
এ নিয়ে বিতর্ক হলে পরের দিন নিজের বক্তব্য থেকে সরে এসে সত্যপাল দাবি করেন, তার সঙ্গে শাহের যে কথোপকথন হয়েছে, তার ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে ‘দাম্ভিক’ বলে যে মন্তব্য সত্যপাল করেছিলেন, তা প্রত্যাহার করে নেননি সত্যপাল। তার থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই ঘটনার পরে প্রায় আট-নয় দিন কেটে গেলেও, এ নিয়ে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি শাহ। সত্যপালের বক্তব্য খণ্ডনও করতে দেখা যায়নি শাহকে।
বিরোধীদের মতে, দুই শিবিরের বিভাজন যে বেড়েছে, এ থেকেই সেটা স্পষ্ট। অনেকের মতে, যার সূত্রপাত হয়েছে কৃষি আইন প্রত্যাহারকে ঘিরে। অনেক বিজেপি নেতার মতোই শাহ চেয়েছিলেন আরও আগে ওই আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। কিন্তু একেবারে ভোটের মুখে এসে তা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবে বিজেপি আদৌও ওই প্রত্যাহারের সুফল পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে দলে।
বিজেপি শিবির অবশ্য বলছে, এ নিয়ে মুখ খুলে সাফাই দিতে গেলেই বিতর্ক কমার বদলে আরও বাড়ত। বিশেষ করে, সামনে যখন উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে এই ধরনের বিতর্ক আদৌও কাম্য নয়। এতে দলীয় কর্মীদের মনোবলে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা ছিল। তাই মুখ বন্ধ রেখে বিষয়টি যাতে সময়ের সঙ্গেই চাপা পড়ে যায়, সেই কৌশল নিয়েছেন শাহরা।
বিরোধীদের প্রশ্ন, দুই শিবিরে মতপার্থক্য না থাকলে ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হল না কেন? সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপাল নিয়োগ করে থাকেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু রাজ্যপালের প্রকৃত রাশ থাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে।
সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তার যিনি ‘বস’ সেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একজন রাজ্যপাল বিরূপ মন্তব্য করছেন এবং তা জনসমক্ষে আসা সত্ত্বেও কোনও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী— এই ঘটনা দুই নেতার মধ্যে দূরত্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
রাজনীতির অনেকের মতে, একমাত্র পাঁচ রাজ্যের ভাল ফলই পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে। আগামী লোকসভার কথা মাথায় রেখে উত্তরপ্রদেশ জয়ের দায়িত্ব কার্যত একার কাঁধে তুলে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জিতলে শক্তিশালী হবে দল, কিন্তু হারলে এ ধরনের ‘সত্য কথন’ আরও প্রকাশ্যে আসতে পারেই বলে মনে করছেন অনেকে।
সান নিউজ/এমকেএইচ