আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নতুন বছরের শুরুতেই লজ্জায় ঢেকে গেছে ভারতের মুখ। কোনো অনুমতি ছাড়া ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ‘নিলামের’ জন্য শত শত মুসলিম নারীর নাম ও ছবি তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় একটি অ্যাপের বিরুদ্ধে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে মুসলিম নারীদের সরব উপস্থিতি রয়েছে। তারা ফের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিসহ তাদের ‘নিলামে’ তোলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সম্প্রতি অনুমতিতে ছবি ব্যবহার করে একটি অ্যাপে মুসলিম নারী বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। চলতি বছরে দ্বিতীয়বারের মতো অ্যাপের মাধ্যমে মুসলিম নারীর বিক্রির এই বিজ্ঞাপন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এদিকে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, তারা ইসমত আরা নামে এক সাংবাদিকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। এদিকে, মুম্বাই পুলিশও এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলে মহারাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন শিবসেনার সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী জানিয়েছে।
ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার (১ জানুয়ারি) ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দা কুররাতুলআইন রেহবার ঘুম থেকে উঠে দেখেন, ‘অনলাইন বিক্রির’ জন্য তাকে নিলামে তোলা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া তার ছবি নেওয়া হয়েছে। অনলাইন ‘বিক্রি হয়’ এমন একটি অ্যাপে আপলোড করা হয়েছে তার ছবি।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, রেহবার একা নন। ভারতে শতাধিক নারীর ছবি আপলোড করা হয়েছে বিক্রির জন্য। এসব নারীর মধ্যে বলিউডের অভিনেত্রী শাবানা আজমিও রয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছেন সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও রাজনীতিবিদ। যে অ্যাপের মাধ্যমে এই নিলাম হচ্ছে, তার নাম ‘বুল্লি বাই’।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় যে অ্যাপের মাধ্যমে এই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, তার নাম ‘সুল্লি ডিলস’। ওই অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রির জন্য নাম উঠেছিল প্রায় ৮০ মুসলিম নারীর। এই ‘বুল্লি’ কিংবা ‘সুল্লি’—দুটি শব্দই ব্যবহার করা হয় নারীদের অপমান করার জন্য।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন অ্যাপটি প্রসঙ্গে ভারতের ‘ফ্যাক্ট চেকের’ ওয়েবসাইট অল্টনিউজের সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, এবারের অ্যাপটিতে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি পাঞ্জাবি ভাষাও ব্যবহার করা হয়েছে।
এর আগে যখন ‘সুল্লি ডিলস’ অ্যাপটি থেকে নারীদের নিলাম করা হয়েছিল, তখনো সেই তালিকায় ছিলেন রেহবার। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, এবারও অ্যাপে ছবি দেখে হতবাক হয়েছেন তিনি। রেহবার বলেন, ‘এটা খুবই অপমানজনক ও হতাশার। যখন অ্যাপে ছবি দেখলাম, তখন আমার গলা ভারী হয়ে আসে, আমার লোম খাড়া হয়ে যায় এবং আমি অসাড় হয়ে পড়ি।’
ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বুল্লি বাই’–এর মতো অ্যাপের মাধ্যমে আসলে আক্ষরিক অর্থে নারীদের বিক্রি করা হয় না। রেহবার বলেন, মুসলিম নারীদের অপমানের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। গত শনিবার অ্যাপটি নামিয়ে নেওয়া হয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মুম্বাইয়ের সাইবার পুলিশ এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ‘সুল্লি ডিলস’ ক্লোন করে এটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিতর্কিত অ্যাপ‘বুল্লি বাই’। ২০২১ সালে মুসলিম নারীদের নিলামে তোলায় অভিযুক্ত ‘সুল্লি ডিল’ অ্যাপের মতোই আরেকটি অ্যাপ বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে নিন্দার ঝড় তুলেছিল ‘সুল্লি ডিল’ অ্যাপটি। সেখানেও বিভিন্ন মুসলিম নারীদের ছবি ও নাম দিয়ে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ‘সুল্লি’ অফার করা হতো।
সান নিউজ/এমকেএইচ