নিউজ ডেস্ক: টাইম ট্রাভেল বা টাইম লুপ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার যেন শেষ নেই। এমনই একটি ঘটনা রয়েছে ইতালিতে। ১৯১১ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা জনমনে খুব সাড়া ফেলে। ঘটনাটি এখনও অমিমাংসিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর দিকে ইতালির রেলওয়ে কোম্পানির খুব প্রসার ঘটে। শিল্পবিপ্লবের সময় রেলপথ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। শুধু লোকাল যাত্রীদের জন্য এক নতুন ধরনের ট্রেনের যাত্রা শুরু করে।
১৪ জুন দুপুরে, প্রায় একশ জন যাত্রী ও ছয় জন ক্রু নিয়ে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। গন্তব্য কাছের একটি রেলস্টেশন। যাত্রা শুরুর পূর্বে তারা কেউ জানতেন না তারা এমন একটি যাত্রায় বের হয়েছেন যার না আছে কোনো গন্তব্যস্থল না আছে কোনো শেষ! গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য পর্বতের বুক-চিরে তৈরি ১ কি.মি. টানেলের মধ্য দিয়ে যেতে হতো। আশ্চর্যের বিষয়, ট্রেনটি টানেলের এক মুখ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেও অন্য মুখ দিয়ে আর বের হয়নি! প্রথমে স্থানীরা মনে করে হয়তো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভেতরে থেমে আছে ট্রেনটি। তখন তারা পুলিশের সহায়তায় টানেলের ভেতর প্রবেশ করেন।
তারা যত টানেলের ভেতরে প্রবেশ করে ততই তাদের মনে জিজ্ঞাসা এবং ভয় বাড়তে থাকে। এগিয়ে যেতে যেতে তারা টানেলের অন্য মুখ দিয়ে বাইরে চলে আসে কিন্তু ট্রেনটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় স্থানীয়রা অবাক হয়ে যায়, এত বড় একটি ট্রেন টানেলের মধ্য থেকে কোথায় গায়েব হয়ে গেল এই ভেবে! কিছু সময় পর রোমান রেলওয়ে অফিসের ২ জন মানুষ এলো খুব আহত অবস্থায়।
তারা জানান, টানেলে ঢোকার আগেই তারা ট্রেন থেকে লাফ দেন। কারণ তাদের অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল, তাদের শরীর ঘামতে শুরু করে, হার্টবিট খুব বেড়ে যায়। সহ্য করতে না পেরে ট্রেন থেকে লাফ দেন। তবে লাফ দেওয়ার আগে টানেলের মুখে সাদা ধোঁয়ার মতো কিছু দেখেছেন তারা। এই দুই যাত্রীর ভাষ্য রহস্যময় ঘটনাতে নতুন মোড় দেয় এবং আরও রহস্যজনক করে তুলে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তার জন্য টানেলটির দুই মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। মানুষ ধীরে ধীরে ভুলেও যায়।
কিন্তু ১৯২৬ সালে হারিয়ে যাওয়াদের মধ্যে ১ জন যাত্রীর আত্মীয় পুরনো নথিপত্র ঘেটে এমন একটি ঘটনা উল্লেখ করলেন যা শুনে সবাই চমকে যায়!
রিপোর্টে বলা হয়, ১৮৪৫ সালে মেক্সিকোতে পাগলাখানায় একইসঙ্গে একইদিনে ১০৪ জন রোগি ভর্তি হয়। এই ১০৪ জন কারা এবং কোন জায়গা থেকেই বা এসেছেন তা কেউ জানতো না। কিন্তু কিছু দিন পর জানা যায়, ১০৪ জনই ইতালিয়ান। তারা বলেছিলেন, তারা রোম থেকে এসেছে। এই মানুষগুলোর বয়ান এবং ১৯১১ সালের ২ জন লাফ দেওয়া যাত্রীর বয়ান একদম মিলে যায়।
অবাক করার বিষয়, ১৯১১ সালে হারিয়ে যাওয়া যাত্রীরা ১৮৪৫ সালে একটি পাগলাগারদে কিভাবে ভর্তি হতে পারে? আরেকটি বিষয়, সব যাত্রী বলছিল যে, তারা রোম থেকে একটি ট্রেনে করে এসেছে। কিন্তু রোম থেকে মেক্সিকোর দূরত্ব প্রায় ১০ হাজার কিমি! এই দুটি স্থানের মধ্যে রয়েছে বিশাল আটলান্টিক মহাসাগর ও বেশ কয়েকটি সাগর! কিভাবে একটি ট্রেন পানির মধ্য দিয়ে এত রাস্তা যেতে পারে?
যাত্রীদের কথা যাচাই করার জন্য রোম থেকে মেক্সিকো আসা জাহাজগুলোর প্যাসেঞ্জার লিস্ট চেক করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনো যাত্রীর নাম নথিপত্রে ছিল না। তাহলে ওই পাগলাগারদে একই ভাষায় কথা বলা, একই দিনে ভর্তি হওয়া, একই দেশের ১০৪ জন মানুষ এলেন কিভাবে? এই ইতালীয় মানুষগুলোর মধ্যে একজনের কাছে একটি টোবাকো বক্স পাওয়া যায়। যার ওপর কোম্পানির নামের সঙ্গে ১৯০৭ সাল লেখা ছিল। এই বক্সটি আজও মেক্সিকোতে রাখা আছে। ট্রেনটি ওই টানেল থেকে কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিল তা আজও রহস্য!
কিন্তু এই ট্রেনটি কয়েকবার রাশিয়া, রোমানিয়া, ইতালির কয়েকটি স্থানে দেখা গিয়েছে! সমস্ত প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায় জানা গেছে, তারা যে ট্রেনটি দেখেছে তা হঠাৎ তাদের সামনে এসেছিল, আবার গায়েব হয়ে গিয়েছিল! ট্রেনটিতে ৩টি কম্পাটর্মেন্ট ছিল। যা একটি লম্বা লোহার দণ্ড দিয়ে একে অপরের সঙ্গে লাগানো ছিল। রোমের মিউজিয়ামে ট্রেনটির একটি মডেল রাখা আছে। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, আলাদা আলাদা জায়গায় দেখতে পাওয়া ট্রেনটি একই ছিল! এটা একটা ভুতূড়ে ঘটনা না-কি ট্রেনটি টাইমলুপে আটকে গিয়ে টাইম ট্রাভেল করছে? মানুষের কাছে এটা এমন একটা প্রশ্ন, যার কোনো উত্তর কারো কাছে নেই!
সাননিউজ/ডি