আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তুরস্ক নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি ‘বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ’ হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্সি অব ডিফেন্স ইন্ড্রাস্ট্রিজের প্রধান ইসমাইল দেমির। সম্প্রতি এসএসবির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তিনি।
ডেইলি সাবাহর এক প্রতিবেদনে বল হয়, ইসমাইল দেমির জানান, তুরস্কে ২০০২ সালে মাত্র ৬২টি প্রতিরক্ষা প্রকল্প চলমান ছিল। বর্তমানে তুরস্কের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৭৫০টি প্রকল্প পরিচালনা করছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে শুরু হয়েছে এগুলোর অর্ধেকের মতো প্রকল্প। আগে প্রজেক্ট ভলিয়ম ছিল মাত্র ৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রতিবেদনে আরও বল হয়, সম্প্রতি এসএসবির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংস্থাটির প্রধান ইসমাইল দেমির বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কের প্রতিরক্ষা খাত প্রেসিডেন্সি অব ডিফেন্স ইন্ড্রাস্ট্রিজের (এসএসবি) নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠান তুরস্ককে অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর পাশাপাশি বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলোর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশে সহযোগিতা করছে।
জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা খাত এবং ‘তার্কিশ আর্মড’ ফোর্সেসের (টিএসকে) আধুনিকায়নে ১৯৮৫ সালে তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তুরগুত ওজালের সময়ে ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এসএজিইবি) প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি কাঠামো পরিবর্তন করে।
তুরস্কের ‘প্রেসিডেন্সি অব ডিফেন্স ইন্ড্রাস্ট্রিজে’র প্রধান জানান, এরপর ২০০৪ সালের মে মাসে ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান। দেশীয় এবং জাতীয় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল।
এসএসবি’র প্রধান বলেন, সাইপ্রাসে তুরস্কের অভিযানের পর থেকে দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বাড়তে থাকে। এ সময় স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিরক্ষা খাতের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।
দেমির আরও বলেন, তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প দেশের নিরাপত্তার জন্য স্থল, আকাশ, সমুদ্র, মহাকাশ এবং সাইবার স্পেসের ক্ষেত্রে কাজ করে চলেছে। আমরা বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়া দেশের একটি এবং আমরা প্রতিযোগিতামূলক পণ্য উৎপাদন করছি।
এসএসবি’র প্রধান বলেন, যদিও আমরা সব সময় বলে আসছি, আমাদের লক্ষ্য প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া। ভিন্ন অর্থে যদি বলা হয়, যে প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত আমরা সেটিই অর্জন করতে চাই।
দেমির আরও বলেন, মাত্র পাঁচ বছর আগেও তুরস্কের কাছে বলার মতো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে কুরকুট, সানগার, হিসার এ+, হিসার ও+ ব্যবস্থা সার্ভিসে রয়েছে। আমরা নিজেদের প্রযুক্তির সাহায্যে মিলগেম জাহাজ, উভচর জাহাজ, সিসমিক গবেষণা জাহাজসহ বিভিন্নর ধরনের জাহাজ উৎপাদন করছি। সম্প্রতি উদ্ভাবনের তালিকায় যোগ হয়েছে এটিএকে-২ হেলিকপ্টার। আমরা মিসাইল প্রযুক্তিতে নতুন যুগের সূচনা করেছি।
এসএসবির প্রধান বলেন, এমএএম-সি এবং এমএএম-এল স্মার্ট যুদ্ধাস্ত্রের পাশাপাশি তেবার, এমএএম-টি, কেজিকে, এইচজিকে এবং এলজিকে-এর মতো নতুন যুদ্ধাস্ত্র সংযোজনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ মানবহীন যুদ্ধবিমান (ইউসিএভি) আরও কার্যকর করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু ড্রোন প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছি তা নয়, অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তিতে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। আমরা পোর্টেবল যুদ্ধাস্ত্র সিস্টেম, এরগনোমিক গ্রেনেড সরঞ্জাম, ফোল্ডেবল মাইন ডিটেক্টর এবং ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (আইইডি) বিরুদ্ধে কার্যকর মিক্সার-ব্লান্টিং সিস্টেমসহ মাঠে আমাদের সৈন্যদের ব্যবহারিক সমাধান দিয়েছি।
সান নিউজ/এমকেএইচ