আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। তারপর থেকেই করোনা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে চীনকেই দায়ী করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রথম থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে বেইজিং।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, করোনার উৎস হয়তো কখনোই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে না। তবে তারা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, এটি জৈবিক অস্ত্র হিসেবে তৈরি করা হয়নি।
করোনার মূল উৎস কোথায় সে বিষয়ে সর্বশেষ মূল্যায়নে যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব দ্য ইউএস ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্স (ওডিএনআই) জানিয়েছে, প্রাণী থেকে মানুষের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ অথবা এটি ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই দুই যুক্তিই ছিল অনেকটা অনুমান নির্ভর।
কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে চীন।
এর আগে গত আগস্টে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। এবার ৯০ দিনের পর্যালোচনা শেষে সর্বশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য উৎস নিয়ে এখনও গোয়েন্দা সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। চারটি সংস্থা তুলনামূলক ‘কম আত্মবিশ্বাসের’ সঙ্গে এটি মূল্যায়ন করেছে যে, এর উৎস আক্রান্ত কোনো প্রাণী বা সম্পর্কিত ভাইরাস থেকে।
তবে অপর একটি সংস্থা ‘মোটামুটি আত্মবিশ্বাস’ নিয়ে বলছে যে, প্রথমবার মানবদেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ সম্ভবত একটি পরীক্ষাগার থেকে দুর্ঘটনার ফলাফল ছিল। সম্ভবত উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি এ ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উহান শহরে ২০১৯ সালের শেষের দিকে যখন করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলো তখন চীনা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অজ্ঞ ছিলেন। তবে সবকিছুর পরেও চীনের দিকে এই অভিযোগ আনা হয়েছে যে, প্রথম থেকেই তারা বিশ্বব্যাপী তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং কারো সঙ্গে তথ্য ভাগ করতে ইচ্ছুক ছিল না।
উহানে প্রথম যে কয়েকজনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে সেগুলোকে উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজারের সঙ্গে যুক্ত করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ এবং বিজ্ঞানীদের এই তত্ত্বের দিকেই পরিচালনা করা হয়েছে যে, ভাইরাসটি প্রথম প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
কিন্তু চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বার বার এ বিষয়ে প্রমাণ চাওয়া হয়েছে যে, ভাইরাসটি উহাব পরীক্ষাগার থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সম্ভবত একটি দুর্ঘটনা।
এরপর গত মে মাসে করোনাভাইরাসের উৎস জানতে তদন্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে সময় চীনের ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং সে বিষয়েও তদন্ত করতে বলা হয়।
এদিকে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজে বের করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উপর নির্ভর করার পদক্ষেপটি সম্পূর্ণ ভাবে একটি রাজনৈতিক প্রহসন।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আমরা করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধানে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে আসছি এবং সক্রিয়ভাবে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবো। এই ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক করার প্রচেষ্টাকে আমরা দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে আসছি।
সান নিউজ/এনকে