আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উত্তর কোরিয়া জাপান উপকূলে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের সামরিক বাহিনী। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ১৭ মিনিটের দিকে সিনপো শহর বা এর কাছাকাছি কোথাও থেকে এ ক্ষেপণাস্ত্রটি উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের কাছের সাগরে ছুড়া হয় বলে দক্ষিণের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের (জেসিএস) বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সিনপোতেই পিয়ংইয়ং তাদের সাবমেরিন এবং সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এসএলবিএম) ছুড়ার সরঞ্জামাদি রাখে; উত্তর কোরিয়া ওই এলাকা থেকে অন্য ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রও ছুড়ে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, তারা দুটি ব্যালস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উত্তর কোরিয়া যে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে, তা ‘খুবই দুঃখজনক’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এমন এক সময়ে পিয়ংইয়ং জাপান সাগরে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লো যখন সিউলে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধানদের বৈঠকের একটি খবর চাউর হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ এ বৈঠকের কথা জানিয়েছিলো।
একটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীর (এডিএএক্স) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শতাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিরাও এখন সিউলে জড়ো হয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় এ প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধবিমান, আক্রমণে সিদ্ধ হেলিকপ্টার, ড্রোনসহ অত্যাধুনিক সব অস্ত্র, মহাকাশে পাঠানোর রকেট এবং বেসামরিক কাজে বায়ুমণ্ডল ও মহাশূন্যে পাঠানোর সরঞ্জাম দেখানো হবে।
বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো নিজেদের বানানো একটি রকেটের পরীক্ষা চালানোরও পরিকল্পনা করছে দক্ষিণ কোরিয়া।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পিয়ংইয়ং যে একের পর এক নানা ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে, তার মধ্যে হাইপারসনিক, দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমানবিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্রও আছে।
কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই উত্তর কোরিয়া তাদের এই অস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সুনির্দিষ্টভাবে তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা নিষিদ্ধ করেছিলো।
পিয়ংইয়ংয়ের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও এর বিপরীতে দক্ষিণ কোরিয়া নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধে মনোযোগী হওয়ায় কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনা অস্ত্র প্রতিযোগিতায় মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা পর্যবেক্ষকদের।
সিউল সম্প্রতি সাবমেরিন থেকে ছুড়া সম্ভব এমন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করেছে, চলতি সপ্তাহে তাদের যে প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী হওয়ার কথা, সেটিকে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনীও বলা হচ্ছে।
কোরীয় যুদ্ধের মাধ্যমে আলাদা হওয়া উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া কার্যত এখনও যুদ্ধের মধ্যেই আছে, ১৯৫৩ সালে দেশদুটির মধ্যকার সংঘাতের ইতি ঘটেছিলো অস্ত্রবিরতিতে, শান্তিচুক্তিতে নয়।
গত সপ্তাহে উত্তরের শীর্ষ নেতা কিম জং উন বলেছিলেন, কোরীয় উপদ্বীপে তিনি নতুন কোনো যুদ্ধ চান না, তবে আত্মরক্ষার জন্য পিয়ংইয়ংয়ের অস্ত্র কর্মসূচি অব্যাহত রাখা জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে বারবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলছেন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আগে পিয়ংইয়ংকে অবশ্যই তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ত্যাগ করতে হবে।
উত্তর কোরিয়া এ শর্তে রাজি হবে- এখন পর্যন্ত তার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না।
সান নিউজ/এফএআর