আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির রেশ না কাটতেই নতুন করে আলোচনার জন্ম দিল ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’। এর মাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেল বিশ্বের প্রভাবশালী ৩৫ রাষ্ট্রনেতা, ৩০০ সরকারি কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তা ও বিলিয়নেয়ারদের গোপন সম্পদ ও লেনদেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে বান্ধবীর জন্য ভ্লাদিমির পুতিনের কেনা ফ্ল্যাট বাড়ি।
২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে মোনাকোয় একটি গোপন লেনদেন হয়েছিল। একটি বিলাবহুল ফ্ল্যাটের হাতবদল হয়। চুক্তিতে সই করেছিল একটি স্থানীয় নোটারি। এতে ৩৬ লাখ ইউরোর বিনিময়ে ক্রেতা পেয়েছিলেন মন্টে কার্লো স্টার কমপ্লেক্সের চতুর্থ তলায় ঝকঝকে একটি ফ্ল্যাট, দুটি পার্কিং স্পেস, একটি স্টোররুম ও সুইমিং পুল ব্যবহারের সুযোগ।
ফ্ল্যাটটির বারান্দায় দাঁড়ালেই চোখে পড়বে মোনাকোর অনন্য সামুদ্রিক দৃশ্য, কখনো সারি সারি সুপার ইয়ট। ভবনের নিরাপত্তা এতটাই কড়া যে কোনো পর্যটক বাসিন্দাদের বিরক্ত করতে পারবেন না।
তবে ফ্ল্যাটের ক্রেতার পরিচয় ছিল গোপন। ক্রয়চুক্তিতে মালিক দেখানো হয়েছিল একটি অফশোর কোম্পানিকে, যা নিবন্ধিত ছিল ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডে। বাইরে থেকে দেখলে এ ঘটনায় রাশিয়ার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া মুশকিল, তবে আসল ক্রেতার পরিচয় লুকানো ছিল আরও গভীরে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান নথিপত্র ঘেঁটে দেখেছে, ওই ফ্ল্যাটের আসল মালিক একজন নারী। ২০০৩ সালে ফ্ল্যাটটি কেনার সময় তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তখন তার বয়স ছিল ২৮ বছর। প্যানডোরা পেপারসের কল্যাণে অবশেষে জানা গেলো সেই নারীর নাম সভেৎলানা ক্রিভোনোগিখ। মাত্র কয়েক বছরেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল তার। নিজের আদিনিবাস সেন্ট পিটারসবার্গে অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট, মস্কোয় সম্পত্তি, একটি ইয়টসহ আরও অনেক সম্পদ হয়েছিল ক্রিভোনোগিখের, যার আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি ডলারের বেশি।
হঠাৎ কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন তিনি? গণমাধ্যমের খবর, ক্রিভোনোগিখের অতীত একেবারে সাদামাটা। তিনি থাকতেন ঘনবসতিপূর্ণ একটি অ্যাপার্টমেন্টে। আর পাঁচটা পরিবারের সঙ্গে বাথরুম ও রান্নাঘর ভাগাভাগি করতে হতো তাকে।
ক্রিভোনোগিখ পড়াশোনা করেছেন বাণিজ্য বিষয়ে। একসময় দোকানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজও করেছেন। তবে নব্বই দশকের শেষের দিকে একজন শুভানুধ্যায়ী জোটে তার। সেই মানুষটি আর কেউ নন, স্বয়ং ভ্লাদিমির পুতিন।
২০২০ সালে প্রোয়েক্ট নামে রাশিয়ার একটি অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট দাবি করে, সেন্ট পিটারসবার্গের মেয়র থাকার সময় পুতিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন ক্রিভোনোগিখ। একসময় পরিণত হন প্রেমিকায়।
তাদের সম্পর্কটা কী ধরনের ছিল তা নিশ্চিত না হলেও পুতিন-ক্রিভোনোগিখ বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তারা একই প্লেনে সঙ্গী হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। গোয়েন্দাপ্রধান থেকে রুশ প্রধানমন্ত্রী, এরপর প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে পুতিনকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন ক্রিভোনোগিখ।
২০০৩ সালে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন এ নারী। প্রোয়েক্টের দাবি, এলিজাবেথা বা লুইজা নামে ওই কন্যার জন্মদাতা পুতিনই।
এ বিষয়ে কখনো মুখ খোলেনি ক্রেমলিন। পুতিনও তার ব্যক্তিগত জীবন গোপন রাখতে পছন্দ করেন। ২০১৩ সালে স্ত্রী লুডমিলার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্টের। এই সংসারে তার দুই কন্যা রয়েছে, নাম- মাশা ও ক্যাটরিনা।
প্রোয়েক্ট গোপন তথ্য ফাঁস করার পর লুইজা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন জায়গায় পার্টি, প্রভাবশালী পরিবারের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ব্যক্তিগত প্লেনে সফর করার ছবি দেখা যায়। লুইজাও পুতিন সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো সুকৌশলে এড়িয়ে যান। গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাতে সাড়া দেননি লুইজা ও তার মা ক্রিভোনোগিখ।
সান নিউজ/এনকে