আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেরালায় অন্তঃসন্ত্বা হাতিকে বারুদ ভরা আনারস খাইয়ে মৃত্যুর খবরটি বেশ আলোচিত হয়েছে। কিন্তু সেই সংবাদটি আসলে সঠিক নয়।
এমনই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস (আইবি টাইমস)। এক্ষেত্রে কেরালার ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তা এবং ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তার বরাত দিয়েছে তারা।
ভারতীয় প্রায় সব সংবাদমাধ্যমেই কেরালার এ ঘটনাটিতে বুধবার (৩ জুন) বলা হয়, অন্তঃসত্ত্বা হাতিটি দলছুট হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ার পর তাকে শায়েস্তা করতে একটি আনারসে বারুদ ভরে টোপ দেয়া হয়। ওই আনারস খেতেই বিকট শব্দে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে ঝলসে যায় হাতিটির মুখ। এই কারণে মারা যায় হাতিটি। এমনকি ঘটনাটি এভাবেই সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরে বন অধিদফতরের এক কর্মকর্তা।
তবে এই বিষয়ে আইবি টাইমসের ‘ফ্যাক্ট চেক’ টিম সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেভাবে ‘টোপ ফেলে’ বা ‘বারুদ ভরা আনারস খাইয়ে’ মারার কথা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। বন্য শূয়োরসহ জীবজন্তুর অনিষ্ঠ থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসীর পাতা সুরক্ষা ফাঁদে দুর্ঘটনাবশত পড়ে মৃত্যু হয়েছে হাতিটির।
বন কর্মকর্তা ড. এবি কাইয়ুম হাতিটির বিষয়ে আইবি টাইমসকে বলেন, কেউ হাতিটিকে আনারস খাওয়ায়নি। বরং কোথাও পড়ে থাকা আনারস সে নিজের বিপদ আঁচ না করতে পেরে খেয়ে ফেলেছে।
ড. কাইয়ুম আরও বলেন, কিছু মানুষ বন্য জীবজন্তুকে নিজেদের সম্পদ ও প্রাণনাশের হুমকি হিসেবে ধরে নিয়ে এ ধরনের ফাঁদ পেতে থাকেন। যেসব লোকালয়ে বন্য জীবজন্তু সমস্যার সৃষ্টি করে, সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
বুনো শুয়োর প্রায়ই ফসলের ক্ষেত নষ্ট করে ফেলে বলে লোকজন তাদের শস্য ও ক্ষেতখামারের সুরক্ষায় এ ধরনের ফাঁদ পেতে থাকে বলেও জানান ড. কাইয়ুম।
ক্ষেতখামারে ঢুকে পড়া বুনো শুয়োরদের হাত থেকে ফসল রক্ষায় চলতি বছরই ভারত সরকার কৃষকদের বাজি ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারে বলে জানা গেছে।
কিছু খবরে হাতিটিকে বুনো বলা হলেও আইবি টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি কেরালার পালাক্কাড শহরের সাইলেন্ট ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের হাতি। আনারসটি খেয়ে ফেলার পর যন্ত্রণা শুরু হলে তা উপশমে হাতিটি পাশের ভেলিয়ার নদীতে ছুটে যায়। সেখানে অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর এটি নিথর হয়ে যায়। নিদারুণ যন্ত্রণা হলেও মৃত্যুর সময় বেশ চুপসে ছিল ১৫ বছরের হাতিটি।
হাতিটির ময়নাতদন্তকারী বুনো পশু বিশেষজ্ঞ ড. ডেভিড আব্রাহাম বলেন, হাতিটির মূলত ফুসফুস ও শ্বাসনালীতে পানি জমে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে (নদীতে নামার পর হাতিটি পানিতে মুখ ডুবিয়েছিল) মারা গিয়েছে। আমরা প্রথমে আসলে কেউই জানতাম না যে হাতিটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। পরে তার দেহে গর্ভাবস্থায় তৈরি হওয়া তরল পদার্থ দেখে বুঝতে পারি প্রাণীটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল।
সান নিউজ/ আরএইচ