আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি এক বক্তব্যে বলেছেন, আফগানিস্তানের অর্থনীতি পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে; এ অবস্থায় এই অর্থনীতি বাঁচানোর জন্য কাবুলের আমেরিকায় আটকে পড়া অর্থ প্রয়োজন।
আমেরিকায় জব্দ করা আফগানিস্তানের ১,০০০ কোটি ডলার অর্থ ছেড়ে দেয়ার জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, পাশ্চাত্যের দেশগুলো আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে বলির পাঠা বানানোর চেষ্টা করছে অথচ ওই দেশটির সংকট নিরসন করা ইসলামাবাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে কাতারে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছিল তা ছিল মূলত আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ফিরে আসার জন্য পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সমঝোতা।
পাকিস্তান গত দুই দশক ধরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে এসেছে যাতে এই গেরিলা গোষ্ঠীকে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসানো যায়। এরপর বিদ্রোহী গোষ্ঠী রাজধানী কাবুলসহ পুরো দেশ দখল করে নেয়ার পর তারা নিজেদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করে।
কিন্তু এটা কেউ ভাবতে পারেনি যে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলে পাকিস্তানকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও আফগানিস্তানের চোরাবালিতে এমনভাবে আটকে ফেলবে যাতে যতই দিন যাবে ততই পাকিস্তান এটা বুঝতে পারবে তারা চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে।
পাকিস্তান সামরিক ও অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে এবং দোহা সমঝোতার মাধ্যমে বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসিয়েছে ঠিকই কিন্তু ইসলামাবাদ ভাবতেও পারেনি যে যুক্তরাষ্ট্র সেদেশে থাকা আফগানিস্তানের অর্থ আটকে দেবে এবং আফগানিস্তানের কণ্ঠনালী যুক্তরাষ্ট্রের হাতের মুঠোয় থাকবে।
এ কারণেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে কাবুলের পতনের পরপরই আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের ব্যাপারে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য শুরু হয়। উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাসীদের প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেন।
ইরানের আফগানিস্তান বিষয়ক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্দুর রহিম কামেল মনে করেন, পাকিস্তান বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সমর্থন হিসেবে পরিচিতি এবং আফগানিস্তানের বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাক সেনা বাহিনীর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। অন্যদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনেরও অনেক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এখন তালেবান ইস্যুতে পাকিস্তান সরকার একা হয়ে পড়েছে।
পাকিস্তানের সহযোগিতায় ২০০১ সালে মার্কিনীরা আফগানিস্তান দখলের পর দুটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আফগানিস্তানের পুরো অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ নেয় ওয়াশিংটন। প্রথমত উদ্দেশ্য হচ্ছে পাকিস্তানকে এটা বোঝানো যে আর্থিক যোগান ছাড়া কোনো একটি সশস্ত্র গেরিলা গোষ্ঠীর পক্ষে দেশ শাসন করা সম্ভব নয়।
আর যেহেতু পাকিস্তান উভয় পক্ষের হয়ে খেলা করছে তাই ইসলামাবাদকেও একটু কানমলা দেয়া। অর্থ আটকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে তালেবানকে যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত হতে বাধ্য করা।
অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র যা বলবে তালেবানকে অবশ্যই তা মেনে চলতে হবে। সুতরাং পাকিস্তানের সঙ্গে যতই খাতির থাকুক না কেন তালেবান যদি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নত হয় তাহলেই কেবল মার্কিন সরকার তাদের বিপুল অর্থ ফেরত দেবে।
যাইহোক, দোহা বৈঠকে গোপনে যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও তালেবানের মধ্যে কি বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে তা যদিও এখনো অজানা রয়ে গেছে কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে পাকিস্তান ভালো করেই বুঝতে পারছে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বলির পাঠায় পরিণত হয়েছে।
এতদিন ধরে পাকিস্তান আফগানিস্তানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করে এলেও এখন পাকিস্তান ও তালেবানকে যুক্তরাষ্ট্র পনবন্দী করেছে। কেননা একদিকে পাকিস্তানের একার পক্ষে যেমন আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে সহযোগিতা করা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া না করে বা নিশ্চিত না হয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে আর্থিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবে না এবং অনিশ্চিত অবস্থায় কোথাও পুঁজি বিনিয়োগ করবে না চীন।
অর্থাৎ চীন কেবল পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের খাতিরে আফগানিস্তানকে মূল্যায়ন করবে না। তাই পাকিস্তান কার্যত একা হয়ে পড়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছে যা আফগানিস্তানের ভবিষ্যত বিনির্মাণে প্রভাব ফেলতে পারে।
সান নিউজ/এমকেএইচ