আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের চিন্তা-ভাবনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী নভেম্বরের শুরু থেকে বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য দেশটিতে ভ্রমণ গাইডলাইন সহজ করা হতে পারে। তবে ভ্রমণকারীরদের অবশ্যই পূর্ণ ডোজ টিকা গ্রাহণের বাধ্যবাধকতা বহাল থাকবে।
যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনার কথা জানিয়েছে দেশটি। খবর সিএনএনের।
স্থানীয় সময় সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে হোয়াইট হাউসের কোভিড-১৯ বিষয়ক সমন্বয়কারী জেফ জিয়েন্টস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।
জেফ জিয়েন্টস বলেন, ‘নভেম্বরের শুরু থেকে বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার প্রক্রিয়া সহজ করার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তবে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চাইলে অবশ্যই পূর্ণ ডোজ টিকা নিয়েই তাকে আসতে হবে। যারা এখানে (যুক্তরাষ্ট্র) আসতে চান, তাদেরকে অবশ্যই টিকাগ্রহণের প্রমাণ বিমানবন্দরে দেখাতে হবে।’
হোয়াইট হাউসের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য টিকাগ্রহণ বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট বাইডেনে প্রশাসন তিনটি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সেগুলো হলো- করোনা পরীক্ষা নিশ্চিত করা, ভ্রমণকারীদের কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং বা সংস্পর্শে আসাদের চিহ্নিত করে তাদেরও টেস্ট করানো এবং বাইরে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরতে উৎসাহিত করা।’
জেফ জিয়েন্টস জানান, করোনা পরিস্থিতি কমলেও যুক্তরাষ্ট্র ‘ভ্রমণ গাইডলাইন’ রেখেই বিদেশি দর্শনার্থীদের সেখানে যাওয়ার সুযোগ দিতে চায়। এ জন্য সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সেন্টার (সিডিসি) একটি ‘কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং অর্ডার’জারি করবে। সেটা প্রস্তুতের কাজ চলছে।
সিডিসির ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, কেউ যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে গেলে বিমানবন্দরে তার ফোন নম্বর ও ইমেইলসহ প্রাথমিক তথ্য নেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান কর্তৃপক্ষ। এটি সিডিসি ও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতর এবং জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছেও থাকবে। অন্তত ৩০ দিন সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো ভ্রমণকারীদের পর্যবেক্ষণে রাখবে। তারা ভ্রমণকারী এবং তার সংস্পর্শে আসাদের অনুসরণ ও খোঁজখবর রাখবে। কারও যদি কোভিডের উপসর্গ দেখা দেয় বা যেকোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
করোনা টেস্ট প্রসঙ্গে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রার তিনদিন আগে ভ্রমণকারীদের করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। বিমানবন্দরে টেস্টের রিপোর্ট দেখাতে হবে। যদি রিপোর্ট নেগেটিভ আসে তবেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ মিলবে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরও তিনদিনের মধ্যে আরও এক দফা টেস্ট করানোর প্রয়োজন পড়বে।
ব্রিফিংয়ে মাস্ক পরিধান প্রসঙ্গে জিয়েন্টস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘বিমানের যাত্রী ও ক্রুদের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক থাকবে। যারা মাস্ক পরবেন না, তাদের জরিমানা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হবে।’
নতুন এসব গাইডলাইন বিদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। সিডিসি ঠিক করে দেবে, পূর্ণাঙ্গ টিকাগ্রহণ বলতে কী বোঝানো হবে এবং কোন কোন টিকা এর আওতায় পড়বে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশিদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা শিথিলে হোয়াইট হাউসের এমন পরিকল্পনার খবরে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকারীরা উচ্ছ্বসিত। বিশেষ করে যারা করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ থেকে বিরত রয়েছেন।
হোয়াইট হাউসের সিদ্ধান্তে খুশি দেশটির পর্যটনশিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনও। তারা কয়েক মাস আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশিদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। পাশাপাশি দেশটির বিমান সংস্থা এবং ব্যবসায়ীরাও এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
সান নিউজ/এনকে