আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানে নারী-পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক বা ব্যভিচার প্রতিরোধে পৃথক মন্ত্রণালয় খুলছে দেশটির বিদ্রোহী সরকার।
নতুন এই মন্ত্রণালয়ের নাম ‘মিনিস্ট্রি ফর প্রোপ্যাগেশন অব ভারচ্যু অ্যান্ড প্রিভেনশন অব ভাইস’; যা বাংলা করলে দাঁড়ায়-‘সৎ কাজের প্রচার ও অসৎ কাজের প্রতিরোধ’।
এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ধর্মীয় পুলিশ বিভাগ’ খোলা হবে যারা চুরির শাস্তি হিসাবে চোরের হাত কাটা ও ব্যভিচারের শাস্তি হিসাবে বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপের দণ্ড দিতে পারবে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আগের শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) এই মন্ত্রণালয় কার্যকর ছিল। মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল ধর্মীয় পুলিশ বিভাগ। যাদের দায়িত্ব ছিল আফগানিস্তানের রাস্তায় টহল দেওয়া এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের চিহ্নিত, পাথর নিক্ষেপ, অঙ্গ কেটে ফেলা এবং এমনকি অপরাধের ভিত্তিতে প্রকাশ্যে হত্যা করা।
মার্কিন সমর্থিত আফগান সরকারের আমলে মন্ত্রণালয়টি বাতিল করা হয়। আফগানিস্তানের ক্ষমতা হাতে নেওয়ার পর ইতোমধ্যে একটি অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়নি। এছাড়া শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানও পিছিয়েছে।
তবে ইতোমধ্যে দেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের চালচলনের ব্যাপারে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবার ব্যভিচার দমনে আগের আমলের মন্ত্রণালয় ফিরিয়ে আনার কথা বলছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী কর্তৃপক্ষ।
সোমবার নিউইয়র্ক পোস্টকে এক সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ ইউসুফ নামে বিদ্রোহী গোষ্ঠী কর্মকর্তা বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য ‘ইসলামের সেবা’। সেজন্যই ‘সৎ কাজের প্রচার ও অপকর্ম প্রতিরোধ মন্ত্রণালয়’ প্রয়োজন।
আফগানিস্তানের সেন্ট্রাল জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইসলামি শরিয়া আইন অনুসারে অপকর্মকারীদের শাস্তি দেওয়া হবে।
বিষয়টির ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো খুনি ইচ্ছাকৃত খুন করে তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। যদি ইচ্ছাকৃত না হয় তাহলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধসহ অন্যান্য শাস্তি দেওয়া হতে পারে।’ বিদ্রোহী গোষ্ঠী কর্মকর্তা জানান, চোরের হাত কেটে ফেলা হবে এবং যারা অবৈধ যৌন সম্পর্কে জড়িত থাকবে তাদের পাথর নিক্ষেপ করা হবে।
এদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী সরকারকে আফগানিস্তানের বৈধ শাসক হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগভর্নর তালিব মৌলভি। হেলমান্দ প্রদেশের দায়িত্বে থাকা এই গভর্নর এককালে ব্রিটিশবিরোধী যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সোমবার এক বিবৃতিতে পশ্চিমাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আর বন্দুক নয়, এবার আমাদের জন্য টাকা-পয়সা নিয়ে আস।’ একই আহ্বান জানিয়েছেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের মাটিকে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে তালেবান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বোরকা পরে দেশ ছাড়লেন নারী গভর্নর : আফগানিস্তানের ইতিহাসে যে তিনজন মহিলা গভর্নরের কথা শোনা যায় তাদের মধ্যে অন্যতম সালিমা মাজারি। তালেবানের ত্রাস হিসাবে খ্যাত এই নারী বেশ কয়েকদিন চরম উৎকণ্ঠায় কাটানোর পর খবর এলো-তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। রয়টার্স।
বল্খ প্রদেশের অন্তর্গত চাহার কিন্ত। এই শহরের গভর্নর হিসাবে কাজ করেছেন সালিমা। তার পরিচিতি ছিল কড়া প্রশাসন পরিচালনায়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, শতাধিক তালেবান যোদ্ধাকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিলেন সালিমা।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে কর্মরত দুই সাংবাদিকের সহায়তায় দেশ ছাড়তে পেরেছেন সালিমা। তালেবানদের নিচ্ছিদ্র প্রহরা সত্ত্বেও বোরকা পরে নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে গেছেন তিনি। একা নন, সপরিবার নিয়েই দেশ ছেড়েছেন সালিমা।
সান নিউজ/এনকে