আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নারীদের পোশাক নিয়ে তালেবানের নির্দেশনার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে জোরালো প্রতিবাদ। ঐতিহ্যবাহী রঙিন পোশাক পরা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিচ্ছেন সারাবিশ্বে বসবাসরত আফগান নারীরা। প্রতিবাদে #DoNotTouchMyClothes ব্যবহার করছেন তারা। হ্যাশট্যাক বাক্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িতে পড়ছে।
জানা গেছে, আফগানিস্তানের আমেরিকান ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন অনুষদ সদস্য বাহার জালালি টুইটারে তালেবানের বিরুদ্ধে প্রথম এ প্রচারণা শুরু করেন। কালো বোরকা ও ওড়না পরা এক নারীর ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, আফগানিস্তানের ইতিহাসে কখনই নারীরা এমন পোশাক পরত না। এটি পুরোপুরি বিদেশি পোশাক ও সংস্কৃতি। তালেবানের প্রচার করা ভুল তথ্যের বিষয়ে মানুষকে জানাতে আমি আফগান ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেছি এবং আমার একটি ছবিও পোস্ট করেছি।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপরই শরিয়া আইনের আওতায় নারীদের অধিকার দেয়ার কথা জানায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী। গোষ্ঠীটির উত্থানে নারীদের মৌলিক অধিকার বাধার মুখে পড়ে। মুখঢাকা বোরকা পরার কড়া নির্দেশনা জারি হয়। আপাদমস্তক ঢাকা বোরকা পরা একদল নারী এই নির্দেশনার সমর্থনে কাবুলের রাস্তায় মিছিল করেন। যদিও বলা হচ্ছে, তালেবান চাপ প্রয়োগ করে ওই নারীদের রাস্তায় নামিয়েছে। মুখঢাকা পোশাকই আফগান নারীদের পোশাক বলে প্রচার করেন ওই নারীরা। একইসঙ্গে মুখঢাকা বোরকার সমালোচনাকারীদের সমালোচনা করেন তারা। এই প্রেক্ষাপটে #DoNotTouchMyClothes আন্দোলন শুরু হয়।
অসংখ্য নারী প্রতিবাদ করেন- আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী কোন পোশাকই মুখঢাকা নয়। পোশাক নিয়ে বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত নারীরা। মুখঢাকা কালো বোরকা ‘ঐতিহ্যবাহী আফগান পোশাক’ বলে যে প্রচারণা হচ্ছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে আফগান নারীদের অসংখ্য ছবি।
#DoNotTouchMyClothes আন্দোলনে শামিল হওয়া নারীরা বলছেন, তালেবানের চাপিয়ে দেওয়া মুখঢাকা বোরকা কখনোই ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছিল না। তালেবান প্রথমবার ক্ষমতায় এসে এই পোশাক পরতে বাধ্য করেছিল। যেমনটা করছে এবার ক্ষমতা দখল করে।
বাহার জালালির পর বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য আফগান নারী ঐতিহ্যবাহী আফগানি পোশাক পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করছেন। এতে তারা হ্যাশট্যাগ হিসেবে লিখছেন #DoNotTouchMyClothes.
ডিডাব্লিউ নিউজের আফগান শাখার প্রধান ওয়াসলাত হাসরাত-নাজিমি টুইটারে ঐতিহ্যবাহী আফগান পোশাক পরে একটি ছবি পোস্ট করেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, এটি আফগান সংস্কৃতি এবং এটাই আফগান নারীদের পোশাক।
বিবিসির আফগান সাংবাদিক সানা সাফি টুইটারে ঐতিহ্যবাহী রঙিন আফগান পোশাক পরে ছবি পোস্ট করে লেখেন, আজ আমি আফগানিস্তানে থাকলে আমার মাথায় হিজাব থাকত।
যুক্তরাজ্যে আফগান বংশোদ্ভূত রাজনীতিবিদ পেমানা আসাদ তার একটি রঙিন পোশাকের ছবি পোস্ট করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের সাংস্কৃতিক পোশাক এটাই, তালেবান নারীদের পরা ওই পোশাক আমাদের ঐতিহ্য নয়।
গেল মাসে কাবুল থেকে পালানো আফগান কণ্ঠশিল্পী ও অ্যাক্টিভিস্ট শেকিবা তিমোরি সিএনএন’কে বলেন, কাবুল পতনের আগেও হিজাবের অস্তিত্ব ছিল। আমরা হিজাবি নারীদের দেখতে পেতাম। কিন্তু তখন এটি ছিল পারিবারিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে, এখন সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত।
সাননিউজ/এমআর