আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিমান হামলা চালানো হয়। হামলাটি ‘নাইন/ইলেভেন’ নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ছিনতাই করা বিমান দিয়ে আল কায়েদা এই হামলা চালায়। এতে ২ হাজার ৯৯৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। ৬ হাজারের অধিক মানুষ আহত হন। ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক অবকাঠামো ও সম্পদ ধ্বংস হয়।
আমেরিকা জানতে পারে, হামলাকারী আল কায়েদার সদস্যরা আফগানিস্তানের লুকিয়েছে। তালেবান নেতারা আল কায়েদা সদস্যদের আশ্রয় দিয়েছে। এটা জানার পর আল কায়েদার সদস্যদের তুলে দিতে তালেবানকে অনুরোধ করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তালেবান বারবার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
এই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে আফগানিস্তানে হামলা চালায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিত্র বাহিনী। ২০ বছরের যুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয় আফগানিস্তান। এতে সব মিলিয়ে ৮০ হাজারের বেশি সামরিক ও বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারান। যেখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত, সেই ৯/১১ স্মরণ করছেন আফগানরা। আজ সেই ৯/১১’র দিন। আফগানরা ভাবতেই পারেনি যে যুক্তরাষ্ট এভাবে প্রতিশোধ নেবে।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার দুইদিন আগেই আল কায়েদা সদস্যরা আফগানিস্তানের নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শাহ মাসুদকে হত্যা করে। তিনি সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী সামরিক কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন।
এ ঘটনায় আফগানরা যখন শোকে আচ্ছন্ন, তখন যুক্তরাষ্ট্র ঘিরে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলো নাটকীয়ভাবে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ বদলে দেয়। কিন্তু কারো কারো কাছে এই ঘটনার তাৎপর্য অনেক।
অবসরপ্রাপ্ত আফগান সরকারি কর্মকর্তা আবদুল রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে হামলার খবর শুনে প্রথমে তেমন গুরুত্ব দিইনি। কারণ, তখন প্রায় বিভিন্ন হামলার খবর রেডিওতে শোনা যেত।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশোধ নিতে আমাদের দেশে এভাবে হামলা চালাবে, আমরা ভাবতেও পারিনি। আজও অবাক হই। ভেবেছিলাম যুক্তরাষ্ট্র বহু দূরের দেশ। তারা এখানে হামলা চালাতে পারবে না।
আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব তালেবান প্রত্যাখ্যান করা পর কঠিন রূপ দেখাতে শুরু করে আমেরিকা।
তৎতকালী আফগান তালা মেরামতকারী কিয়াম উদ্দিন বলেন, মার্কিন আক্রমণে আফগানিস্তান ঘিরে চলতে থাকা দীর্ঘদিনের সংঘর্ষের অবসানের স্বপ্ন দ্রুতই মিশে যায়। তারা এখানে এসে আরও বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে তোলে।
আল কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলতে থাকায় তালেবান পুনরুজ্জীবিত হয়। বিদেশি সেনাদের বিরুদ্ধে আফগান ধর্ম ও ঐতিহ্যকে অসম্মান করার অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এতে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু বাড়তে থাকে।
কিয়াম উদ্দিন বলেন, মানুষ আশাবাদী হয়ে ওঠে। অনেক শরণার্থী পাকিস্তান ও ইরান থেকে ফিরে আসতে শুরু করে। তারা বুঝতে পারেনি যে আরও বড় সমস্যার মুখে পড়তে হবে।
শিক্ষক নুরুল্লাহ বলেন, প্রতিবেশীর বাড়ির নিচতলায় লুকানো টিভিতে ওই হামলার খবর শুনেছিলাম। তালেবান টেলিভিশন নিষিদ্ধ করেছিল। ওই দৃশ্য ছিল বীভৎস। ওই আগুনের ছবি বারবার দেখানো হচ্ছিল।
সাননিউজ/এমআর