আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়া সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠীর ডি ফ্যাক্টো নেতা আব্দুল গনি বারাদারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধানের গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৩ আগস্ট) কাবুলের সশস্ত্র গোষ্ঠীর এই নেতার সঙ্গে সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম জে. বার্নসের ওই গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হাতে যাওয়ার পর মার্কিন প্রশাসন এবং এই গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ নেতার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
আফগানিস্তান থেকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার কাজ শেষ না হলে পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে সোমবার সশস্ত্র বিদ্রোহী হুঁশিয়ারি দেয়। কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি নিয়ে প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা।
এর মাঝেই সশস্ত্র গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতার সঙ্গে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানাতে অস্বীকার করেছে সিআইএ। তবে মার্কিন নাগরিক এবং আফগান মিত্রদের সরিয়ে নেয়ার সময়সীমা বৃদ্ধির বিষয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতার সঙ্গে সিআইএ পরিচালকের আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সৈন্য, নাগরিক, আফগান মিত্র এবং সশস্ত্র বিদ্রোহীর শাসনের ভয়ে দেশ ছাড়তে মরিয়া লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্র আশঙ্কা করেছেন। এ জন্য ৩১ আগস্টের পরও তারা আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতিতে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার কাজ চালিয়ে যেতে চান। এ নিয়ে পশ্চিমা মিত্ররা বাইডেন প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন।
ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্ররা বলেছেন, তাদের কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু সশস্ত্র গোষ্ঠীর একজন মুখপাত্র আগামী ৩১ আগস্টের পর কোনও সৈন্য আফগানিস্তানে অবস্থান করলে তা রেড লাইন অতিক্রম করবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে সময়সীমা অতিক্রমের জন্য পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
সিআইএ পরিচালকের প্রতিপক্ষ হিসেবে আব্দুল গনি বারাদারের এই ভূমিকা তাকে ১১ বছর আগে সিআইএ এবং পাকিস্তানের অভিযানে গ্রেফতারের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। গ্রেফতারের পর তাকে ৮ বছর কারাবন্দি করে রাখা হয়।
সশস্ত্র বিদ্রোহীর এই নেতা অবশ্য পশ্চিমাদের কাছে অপরিচিত নন। ২০১৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীর শান্তি আলোচনার প্রধান মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল গনি বারাদার। ওই শান্তি আলোচনার ফল হিসেবে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারে রাজি হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা। ২০২০ সালের নভেম্বরে সোনার প্রলেপযুক্ত চেয়ারে বসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে বৈঠকও করেন।
সশস্ত্র বিদ্রোহীর প্রতিষ্ঠাতা সর্বোচ্চ নেতা মুহাম্মদ ওমরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আব্দুল গনি বারাদার সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতৃত্ব নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন সশস্ত্র বিদ্রোহীদের এই নেতা এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের শাসনামলে তিনি কয়েকটি প্রদেশের গভর্নরের দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
সান নিউজ/এফএআর