সান নিউজ ডেস্ক: সর্বশেষ আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর ১৭ আগস্ট তালে’বান প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেন৷ তাদের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ দিয়েছেন নতুন প্রতিশ্রুতি৷ তার মধ্যে পাঠকদের জন্য তাদের দেয়া ১০ প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হলো-
কারো প্রতি শত্রুতা নয়:
কাবুল দখলে নেয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালে'বান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ আন্তর্জাতিক পক্ষের সঙ্গে সঙ্গে যেকোন সংঘাত এড়ানোর কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ কারো প্রতি ইসলামিক এমিরেটের শত্রুতা বা বৈরিতা নেই৷ বৈরিতার অবসান হয়েছে এবং আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই৷ আমরা কোন অভ্যন্তরীন বা বহিরাগত শত্রু চাই না৷’’
প্রতিশোধ নেয়া হবে না:
তালে'বান ক্ষমতায় আসার পর ভীত সন্ত্রস্ত আফগানরা দেশ ছাড়তে উন্মুখ হয়ে ওঠেন৷ তালে'বান মুখপাত্র তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘আমি আমার স্বদেশিদের আশ্বস্ত করতে চাই, অনুবাদক, সামরিক কার্যক্রমের সঙ্গে বা সাধারণ নাগরিক যারাই আছেন না কেন সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে৷ কারো প্রতি প্রতিশোধমূলক আচরণ করা হবে না৷’’
বিদেশিদের নিরাপত্তা থাকবে:
কাবুলে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে তালে'বান মুখপাত্র বলেন, ‘‘দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রথমত, আমরা নিশ্চিত করতে চাই যেসব এলাকায় দূতাবাস আছে সেখানে পুরোপুরি নিরাপত্তা থাকবে৷ সব বিদেশি রাষ্ট্র, প্রতিনিধি, দূতাবাস, মিশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা দাতা সংস্থাগুলোকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই তাদের বিপক্ষে আমরা কিছু করতে দিব না৷ আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে৷’’
প্রতিবেশিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক:
‘‘আমি আমাদের প্রতিবেশি দেশি, আঞ্চলিক দেশগুলোকে আশ্বস্ত করতে চাই যে তাদের বিরুদ্ধে বা কোন দেশের ক্ষতিসাধনে আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না৷ ... আমরা আন্তর্জাতিক সীমানা ও যোগাযোগকে স্বীকৃতি দেই৷ আমাদের সেভাবেই বিবেচনা করা উচিত যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের কোন সমস্যা নেই,’’ বলেন জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ৷
নারীদের ‘অধিকার’ দেয়া হবে:
সংবাদ সম্মেলন মুজাহিদ বলেন, ‘‘ইসলামিক এমিরেট শরীয়া কাঠামোর আলোকে নারীদের অধিকার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ আমাদের বোন, আমাদের পুরুষরা একই অধিকার ভোগ করবেন৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা আমাদের নিয়ম ও নীতির আলোকে কাজ কাজ করতে পারবেন৷ ...আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই নারীদের প্রতি কোন বৈষম্য করা হবে না, তবে অবশ্যই সেটি আমাদের কাঠামোর মধ্যে হবে৷’’
গণমাধ্যমে নারীরা কাজ করতে পারবে:
সংবাদ সম্মলনে প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদ জানান, নতুন সরকারের গঠন হলে তাদের ইসলামিক শরীয়া আইন অনুযায়ী নারীরা গণমাধ্যম থেকে শুরু করে অন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতেও কাজ করতে পারবে৷ তবে দ্রুতই বিষয়টি পরিস্কার করা হবে৷
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা:
‘‘আমরা গণমাধ্যমকে আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোর মধ্যে গণমাধ্যমের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ বেসরকারি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অব্যহত থাকবে৷ তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে৷’’ এমন আশ্বাস দিলেও মুজাহিদ বলেন গণমাধ্যমের কার্যক্রমে ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন থাকতে হবে৷ ‘‘গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ হতে হবে৷...তারা আমাদের কাজের সমালোচনা করতে পারবে যাতে আমরা উন্নতি করতে পারি,’’ বলেন তিনি৷
চোরাচালান, মাদক রোধ:
মুজাহিদ সংবাদ সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা দেশের পুরুষ, নারী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে চাই কোন ধরনের মাদক আমরা উৎপাদন করব না৷ কেউ মাদক চোরাচালানে জড়িত থাকবে না৷’’ তবে মাদকমুক্ত আফগানিস্তান গড়তে ও বিকল্প শস্যের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছেও সহায়তা চান৷
অর্থনীতি পুনর্গঠন:
দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তালে'বান মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমরা দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলব৷ এজন্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালুর ব্যবস্থা করা হবে৷ ...অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা, বিনির্মাণ ও সমৃদ্ধির জন্য আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ ও অন্য যে সম্পদ আছে তা নিয়ে কাজ করব৷ এজন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করছি যে খুব দ্রুতই পুরো পরিস্থিতি, আমাদের অর্থনীতি আমরা বদলে ফেলতে পারব৷’’
সরকারে সব পক্ষ থাকবে:
সরকারে সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে মুজাহিদ জানান, ‘‘আফগানিস্তানে একটি শক্তিশালী ইসলামিক সরকার থাকবে৷ নাম কী হবে কিংবা আর কী করা হবে সেটি রাজনৈতিক নেতাদের উপর ছেড়ে দিচ্ছি আমরা৷ তারা এ নিয়ে জরুরিভিত্তিতে আলোচনা করছেন৷ কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত যে আমাদের মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি ইসলামিক ও শক্তিশালী সরকার গঠন করা হবে এবং আমাদের নাগরিকদের মূল্যবোধ বা স্বার্থবিরোধী হবে না৷’’
সান নিউজ/এমএম