নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৬ আগস্ট ফ্লাইটের টিকিট ছিলো তাদের। আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরবেন তাদের জন্য ছিলো এটা। কিন্তু তার একদিন আগেই (১৫ আগস্ট) দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্র বাহিনী।
এর পর বন্ধ হয়ে যায় দেশটির সঙ্গে আকাশপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন আফগানিস্তানে থাকা অন্যান্য দেশের নাগরিকরা। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২৭ জন বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন বলে জানা গেছে। অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা থেকে দ্রুত দেশে ফিরতে চান তারা।
দেশটির মোবাইল অপারেটর ‘আফগান ওয়্যারলেসে’ কাজ করেন সাত বাংলাদেশি। তারা হলেন- মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, আবু জাফর মোহাম্মদ মাসুদ করিম, রাজিব বিন ইসলাম, মনিরুল হক, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ইমরান হোসেন ও শেখ ফরিদ আহমেদ। তারা একযুগেরও বেশি সময় ধরে সেখানে কাজ করছেন। বর্তমানে কাবুলে অবস্থান করছেন তারা।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আফগান ওয়্যারলেসে কাজ করছেন ১১ বছর ধরে। মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ১৮ বছর ধরে কাজ করছেন। আফগান ওয়্যারলেস দেশটির প্রথম মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে।
রাজিব বিন ইসলাম আফগান ওয়্যারলেসের পিবিএক্স ও কন্টাক্ট সেন্টার অপারেশনের প্রধান।
তিনি বলেন, ১৬ আগস্ট আমাদের ফ্লাইটের টিকিট ছিল। দেশে ফেরার সকল প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু একদিন আগেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। আর দেশে ফেরা হয়নি। আমরা এখানে আফগান ওয়্যারলেসের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ পরিবেশে আছি। বাইরে কোথাও যাচ্ছি না। তারপরও শঙ্কা তো কাজ করেই! দেশে পরিবার-পরিজন দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে।
আফগান ওয়ারলেসের ২০ শতাংশ মালিকানায় রয়েছে আফগান টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। বাকি ৮০ শতাংশ মালিকানা আফগানের বায়তা গ্রুপের (Bayat Group)। এই গ্রুপটির চেয়ারম্যান এহসানুল্লাহ বায়াত দেশটির খ্যাতনামা ব্যবসায়ী, যার মালিকানায় অ্যারিয়ান টেলিভিশন ও রেডিও (Ariana TV and Radio) রয়েছে। রাষ্ট্রীয় অংশিদারিত্ব এবং প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠান হওয়ার সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সঙ্গে থাকা দু’জন কয়েকদিন আগেই দেশে ফিরেছেন। আমাদের ফেরার প্রস্তুতি ছিল। তার আগেই আটকা পড়ে গেলাম। আমরা কোম্পানির কম্পাউন্ডে আছি।
দেশ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন তারা। তবে কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারবো, এ বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা পাইনি।
বাংলাদেশের কোনও দূতাবাস নেই আফগানিস্তানে। তবে পার্শ্ববর্তী উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাস ইতোমধ্যে আফগানিস্তানে বাংলাদেশিদের সহায়তার জন্য হটলাইন চালু করেছে।
আফগান ওয়্যারলেসের পরিচালক পদে কাজ করছেন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, আমাদের পরিবার দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে। উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হচ্ছে। কিন্তু কবে কীভাবে দেশে ফিরতে পারবো, তা জানি না। আমরা দ্রুত দেশে ফিরে যেতে চাই।
এখন পর্যন্ত ২৭ জন বাংলাদেশির তথ্য পেয়েছে উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাস। এদের মধ্যে ১৮ জন কাবুলে আছেন। তাবলীগের ছয়জন পাকিস্তান সীমান্তের কাছে জালালাবাদ শহরে আছেন এবং বেসরকারি খাতে কর্মরত ব্যক্তি একজন আছেন মাজার-ই-শরীফে। এরমধ্যে তিনজন কয়েদির একজন কাবুলে রয়েছেন। বাকি দুইজনের তথ্য এখনও জানা যায়নি।
সাননিউজ/এএসএম