আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানের নির্বাচিত সরকারের পতন হয়েছে, কাবুলের দখল নিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী। ইতোমধ্যে আফগানিস্তানকে ইসলামি আমিরাত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী ইতোমধ্যে দেশের পতাকার পরিবর্তন এনেছে।
চলতি সপ্তাহের রোববার (১৫ আগস্ট) তোরখাম সীমান্তের আফগানিস্তান পার্শ্বে তাই দেশটির জাতীয় পতাকার পরিবর্তে উড়ছে তালেবান পতাকা, সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন দাড়িঢাকা মুখের সশস্ত্র গোষ্ঠী সদস্যরা।
অন্যদিকে আফগান শরণার্থীরা যেন পাকিস্তানে অবাধে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তোরখামসহ আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তবর্তী সব এলাকায় রেঞ্জার্স (পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী) কর্মীদের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়িয়েছে পাকিস্তানের সরকার।
বৃহস্পতিবার তোরখাম সীমান্ত সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন বিবিসির প্রতিবেদক সারাহ আতিক।
সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অল্প কিছুদিন আগেও প্রতিদিন যেখানে এই সীমান্ত দিয়ে ৬ থেকে ৭ হাজার মানুষ যাতায়াত করতেন, সেখানে বৃহস্পতিবার এই সীমান্ত এলাকার দুই দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জন ব্যক্তি।
পাকিস্তান সীমানরক্ষী কর্মীর প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠী যখন মে মাসে আফগানিস্তান দখলের অভিযান শুরু করলো, তখন থেকে এই সীমান্ত এলাকায় শরণার্থীদের ভিড় শুরু হয়েছিলো; তবে সশস্ত্র গোষ্ঠী কাবুল দখলে নেওয়ার পর থেকে আফগান যাত্রীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
কাবুল তালেবান দখলে চলে যাওয়ার পর তোরখাম সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিলো পাকিস্তান, বৃহস্পতিবার থেকে কেবল আফগান পণ্যবাহী ট্রাক ও পাসপোর্ট ও ভিসাধারী বৈধ যাত্রীদেরই প্রবেশে করতে দিচ্ছে দেশটি।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি প্রতিবেদককে এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা চাই না আফগানিস্তান থেকে এদেশে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ুক।
তাছাড়া বিপুল পরিমাণ শরণার্থী ইতোমধ্যে পাকিস্তানে অবস্থান করছেন। আরও শরণার্থী নেওয়ার মতো অবস্থা আমাদের নেই। এ কারণেই সীমান্ত এলাকায় লোকবল বৃদ্ধি ও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।’
আহসান খান নামে আফগানিস্তানের একজন নাগরিকের সঙ্গে কথা হয় বিবিসির। জালালাবাদের বাসিন্দা আহসান খান নিজের পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে বৈধভাবেই পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য তোরখামে এসেছেন।
বিবিসিকে আহসান খান বলেন, ‘স্কুলে পড়ার সময় থেকেই এই সীমান্ত দিয়ে চলাচল করছি আমি। একটা সময় ছিল, যখন বাবা এবং আমি জালালাবাদ থেকে সরাসরি এই সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করতে পারতাম।’
কিন্তু এখন তা কেবলই ‘সুখস্মৃতি’ উল্লেখ করে আহসান খান বিবিসিকে বলেন, ‘যখন সীমান্ত এলকায় (পাকিস্তান পার্শ্বে) এত সংখ্যক সশস্ত্র কর্মী দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন আপনি কিভাবে আশা করতে পারেন যে আফগানরা আশ্রয়ের জন্য সীমান্তে এসে উপস্থিতি হবেন? আর, তালেবান সংঘাতে সহায়-সম্বল হারানো গরিব আফগানরা পাসপোর্ট-ভিসা পাবেন কোথায়?’
এদিকে, দেশ ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে আফগান নাগরিকদের ব্যাপকভাবে নিরুৎসাহিত করছে তালেবানগোষ্ঠী। তোরখাম সীমান্তের পাকিস্তান পার্শ্বে একটি ছোটো খাবারের দোকান চালান ওয়ায়িদ আলি। বিবিসিকে তিনি জানান, তালেবান বাহিনী সীমান্ত এলাকায় পাহারা শুরুর পর থেকে আর আফগান শরণার্থীদের দেখা যাচ্ছে না।
বিবিসিকে ওয়ায়িদ আলি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে, তালেবান বাহিনী যখন আফগানিস্তানের শহরগুলো একের পর এক দখল করছিল, তখন এই সীমান্তে প্রচুর আফগান শরণার্থী ভিড় করেছিলেন। তাদের মধ্যে যারা পাকিস্তানে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই আমাকে বলেছিলেন, তালেবান শাসন থেকে বাঁচতে তারা এখানে এসেছেন।’
‘বর্তমানে তালেবান শাসন আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ কেমন আছেন তা আমি জানি না।’
আফগানিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত আছে পাকিস্তানের। ২০১৬ সাল থেকে পাকিস্তানে প্রবেশে ইচ্ছুক সব আফগান নাগরিকের জন্য বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা বাধ্যতামূলক করেছে দেশটি।
সাননিউজ/এএসএম