আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুদ্ধ-সংঘাতে বিপর্যস্ত দীর্ঘদিন আফগানিস্তান। আফগানিস্তানে যুদ্ধের ব্যয়ভারের বড় একটি অংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল নাগাদ দেশটিতে এক লাখের বেশি সৈন্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের।
সে সময় বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার খরচ হতো।
ব্রোয়ন ইউনিভার্সিটির ২০১৯ সালের গবেষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে ৯৭ হাজার ৮শ কোটি ডলার খরচ করেছে। তবে ওই গবেষণায় এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, যুদ্ধের সার্বিক খরচ নিরূপণ করা কঠিন কারণ সরকারের নানা দফতরের হিসাব রাখার আলাদা আলাদা ধরন রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবর্তনও হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরেই আফগানিস্তানে সবচেয়ে বেশি সৈন্য ছিল যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির। যুক্তরাজ্য আফগানিস্তানে ৩ হাজার কোটি ডলার আর জার্মানি এক হাজার ৯শ কোটি ডলার খরচ করেছে বলে ধারণা করা হয়।
কিন্তু হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করেও কোনো কাজ হয়নি। আফগান বাহিনীর পেছনে ব্যয় করা অর্থ, যুদ্ধের সরঞ্জাম তালেবান যোদ্ধাদের সামনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে।
রোববার দিনব্যাপী উত্তেজনার মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেয় তালেবান। এরপর থেকেই ভয় আর আতঙ্কে দেশের মাটি ছাড়ছেন আফগানরা। কাল সকাল থেকে কাবুল বিমানবন্দরে কয়েক লাখ মানুষ ভিড় করছেন। অনেকে বিমানে চড়তে পারলেও এখনও বহু মানুষ অপেক্ষা করছেন সেখানে।
তালেবান আফগানিস্তান দখল করে নেয়ার পর থেকেই সেখানকার সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। পরবর্তীতে কী হতে যাচ্ছে তা নিয়েই ভাবনার শেষ নেই।
এর মধ্যেই জাতির উদ্দেশে দেয়া একটি ভিডিও বার্তায় তালেবানের উপ-প্রধান নেতা মোল্লা বারাদার আখুন্দ বলেছেন, এখন সময় হয়েছে আফগানিস্তানের মানুষের সেবা আর তাদের জীবনমান উন্নয়ন করার।
তালেবানের উপ-প্রধান বলেন, ‘আমাদের জাতিকে আমরা সবচেয়ে ভালো সেবা দেবো, পুরো জাতির জন্য প্রশান্তি নিয়ে আসব, তাদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য যতদূর যা করা দরকার, আমরা তাই করব।’
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান তালেবানের শাসনে ছিল। এর মধ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট সেখানে যৌথ অভিযান চালায়, যার মাধ্যমে তালেবান শাসনের অবসান ঘটে।
অভিযানে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের দমন করা হলেও ‘শান্তিরক্ষার স্বার্থে’ সেখানে ঘাঁটি গেড়ে অবস্থান করছিল পশ্চিমা সেনারা। কিছু বছর পার হওয়ার পর সেখান থেকে ধাপে ধাপে যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্য দেশের সেনাদের ফিরিয়ে নেয়া হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের সেনাদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করলে প্রত্যন্ত এলাকা দখল করে থাকা তালেবান কাবুলের ক্ষমতার মসনদে উঠতে জোর লড়াইয়ে নামে। যদিও এর মধ্যে তালেবানের সঙ্গে কাবুলের শাসকগোষ্ঠীর সংঘাতের অবসানে কাতারসহ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যস্থতায় নানা সময়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সব আলোচনাই ভেস্তে গেছে।
সাননিউজ/এএসএম