আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানে আশরাফ গনি সরকারের পতন হয়েছে তালেবানের কাছে। এখন তারা মন্ত্রিপরিষদ গঠনের কাজ শুরু করেছে। এ অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এই সরকারকে সমর্থন করতে রাজি হয়েছে। অথচ তালেবান সরকারকে হটাতে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শুরু করেছিলো। দেশটির সেনা বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করতে তারা ব্যয় করেছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। সোমবার (১৬ আগস্ট) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
আফগান সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ সেই সেনাবাহিনীকে গুঁড়িয়ে দিতে তেমন সময় লাগেনি তালেবানের। বলা চলে, প্রায় এক মাসের মধ্যে আফগান সেনাবাহিনী গুঁড়িয়ে গেছে।
বিশেষ করে গত কয়েক দিনের কথা যদি বলা হয়, এই সময়ে তালেবান আফগানিস্তানের সব কটি গুরুত্বপূর্ণ শহরই দখল করে নেয়। আর তারা রোববার দখল করে কাবুল। দখল করে প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেস। তালেবান কাবুলে প্রবেশের পরই দেশ ছাড়েন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এর মধ্য দিয়ে তালেবানের হাতে গনির সরকারের পতন হয়।
আগের দিন শনিবার গনি টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর ভাষণে আফগান নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দেশ ও জনগণকে রক্ষার জন্য আফগান বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে দৃঢ় মনোভাব রয়েছে।
কিন্তু তালেবানের দখল অভিযানের সামনে আফগান বাহিনী যেভাবে গুঁড়িয়ে গেলো, তা অনেককেই বিস্মিত ও হতবাক করেছে। তালেবানের দখল অভিযানকালে অনেক আফগান সেনা পালিয়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে নির্ধারিত যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেছেন। অনেকে তালেবানের সঙ্গে সমঝোতায় গেছেন। অনেকে আবার তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র তালেবানের কাছে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন।
মার্কিন গোয়েন্দাদের এক মূল্যায়নে বলা হয়েছিলো, তালেবান ৩০ দিনের মধ্যে কাবুলকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। আর ৯০ দিনের মধ্যে তাদের হাতে কাবুলের পতন ঘটতে পারে। কিন্তু তাঁদের এই হিসাবে মস্ত গলদ ছিলো। গতকাল তালেবানের কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে।
কিছু মার্কিন কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রাদেশিক গভর্নররা বিশ্বাস করতেন, পরাজয় নিশ্চিত। তাই তাঁরা অধিক রক্তপাত এড়াতে সেনাদের আত্মসমর্পণ বা পালিয়ে যেতে বলে থাকতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেন, একবার যখন মনোবল ভেঙে যায়, তখন তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আফগান সেনাবাহিনীর দ্রুত ভেঙে পড়ার জন্য এই বিষয়কে আংশিকভাবে দায়ী করা যায়।
আফগান সেনাবাহিনী নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। সেই প্রসঙ্গে টেনে অপর এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, আপনি কি আপনার নেতাদের জন্য জীবন দেবেন, যাঁরা আপনাকে সময়মতো বেতন দেন না?
গজনি প্রদেশে তালেবানের এক কমান্ডার বলেন, যখনই মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহার শুরু হয়, তখনই আফগান সরকারি বাহিনীর ভেঙে পড়া শুরু হয়। এই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে কোনো আদর্শ ছিলো না।
তালেবানের ওই কমান্ডার আরও বলেন, প্রদেশগুলোর এই অপ্রত্যাশিত পতনের মূল কারণ—তাদের (তালেবান) ও মার্কিন সেনা প্রত্যাহার।
২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের সময় প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব ছিলেন রিচার্ড আর্মিটেজ। তিনি আফগানিস্তান-সংক্রান্ত কূটনীতিক কার্যক্রমে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, আফগান সেনাবাহিনীর এভাবে ভেঙে পড়াটা দুই দশক ধরে আন্তর্জাতিক তৎপরতার বড় ধরনের ব্যর্থতাকেই সামনে আনে।
সাবেক কূটনীতিক রিচার্ডের ভাষ্য, আফগান বাহিনী যুদ্ধ করেছে। তারা যুদ্ধ করতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আফগান সেনাবাহিনী যে সরকারের জন্য লড়াই করবে, তারা কি তার যোগ্য?
সান নিউজ/এফএআর