আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের মধ্যে মাত্র দশ দিনে গোটা আফগানিস্তান দখলে নিয়ে তালেবান রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করে। এরপরই সরকারের ঘনিষ্ট সদস্যদের নিয়ে রোববার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় দেশত্যাগ করেছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। তিনি তাজিকিস্তানে উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়লেও বিষয়টি অস্বীকার করেছে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।
রোববার স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
দোর্দণ্ড প্রতাপে তালেবানের কাবুল দখল করার পর দুটি সূত্রের বরাতে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির দেশত্যাগের খবর জানিয়েছে তোলো নিউজ। এর আগে তালেবান প্রতিনিধিদলের প্রেসিডেন্ট গনির প্যালেসে ঢোকার খবর পাওয়া যায়।
সূত্র দুটি বলেছে, রোববার তালেবান যোদ্ধারা রাজধানী কাবুলে ঢোকার পর প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশত্যাগ করেন। এসময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার কয়েকজন ঘনিষ্ট উপদেষ্টা ও সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও চলে গেছেন।
এর আগে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ মোহাম্মদী বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশের চলমান সংকট নিরসনের ক্ষমতা দেশের রাজনৈতিক নেতাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। সম্প্রতি আফগান অর্থমন্ত্রীও দেশত্যাগ করেন।
মোহাম্মদী বলেন, দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল সোমবার (১৬ আগস্ট) দোহা যাবে। ওই প্রতিনিধিদলে ইউনুস কানুনি, আহমদ ওয়ালী মাসউদ ও মোহাম্মদ মহাকিকসহ সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতারা রয়েছেন।
রোববার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছেন, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট গনি প্রতিবেশী তাজিকিস্তানের উদ্দেশে কাবুল ছেড়েছেন। তবে নিরাপত্তার কারণে আশরাফ গনি কোথায় যাচ্ছেন সে ব্যাপারে যেকোনো ধরনের তথ্য জানাতে অস্বীকার করেছে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।
রাজধানী কাবুলে প্রবেশকারী তালেবানের একজন প্রতিনিধি বলছেন, তালেবানের যোদ্ধারা গনির অবস্থান জানতে চেষ্টা করছেন।
তালেবান ঘনিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক চুক্তির পর গনি পদত্যাগ করবেন এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে তুলে দেবেন। এর আগে তালেবান জোর করে রাজধানী কাবুল দখল করবে না বলে জানিয়েছিলো।
তালেবান কাবুলের চারপাশ ঘিরে ফেলার পর ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এ আলোচনার মধ্যে জার্মানিতে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত আলী আহমদ জালালিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগের খবর দিচ্ছে আফগান গণমাধ্যমগুলো।
তালেবানের একজন মুখপাত্র এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব অন্য পক্ষের (আফগান সরকারের)। তবে সরকার এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা না করলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।’
কাবুলের পরিস্থিতি এখন থমথমে। সরকার বলছে, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছে। তালেবানও জানিয়েছে, তারা জোর করে রাজধানী কাবুল দখল করবে না। তবে কাবুলের সব প্রবেশদ্বারে তালেবান যোদ্ধাদের অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।
রয়টার্স জানাচ্ছে, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন বলে শনিবার (১৪ আগস্ট) জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। পদত্যাগ করে তিনি তালেবান কমান্ডারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথ তৈরি করে দিচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
তালেবান যোদ্ধারা কাবুলের চারপাশ থেকে শহরটিতে ঢুকতে শুরু করেছে এমন খবর আসার মধ্যে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টোলো টিভিতে সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে কথা বলতে দেখা গেছে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল সাত্তারকে।
আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। এমন কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রাজধানী শহর কাবুলে কোনো ধরনের হামলা হবে না।
আফগান সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এর আগে জানায়, তালেবানের আলোচকরা ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে গেছেন। চাপের মুখে গনি সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া যে শুরু হয়েছে তা এখন স্পষ্ট।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানাচ্ছে, তালেবানের দাপটে কাবুলের বাসিন্দাদের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল তা অনেকাংশে কেটে গেছে। সবাই যার যার বাড়িতে অবস্থান করছেন। রাস্তায় এখন তেমন কোনো যানবাহন দেখা যাচ্ছে না।
তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন বলেছেন, তালেবান এখনো কাবুলে ঢোকেনি। তবে যোদ্ধাদের কাবুলের প্রবেশদ্বারগুলোতে থাকতে বলা হয়েছে। পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ভর করছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে সরকারের সহযোগিতার ওপর।
রাজধানী কাবুলের উপকণ্ঠে তালেবান যোদ্ধাদের দেখা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর কাবুল ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিবিসির এক প্রতিনিধি বলছেন, কিছু সরকারি অফিস খালি করতে বলা হয়েছে এবং দোকানপাট বন্ধ। এর কোনো কারণ জানানো হয়নি।
সাননিউজ/এমএইচ