আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানে আবারো তালেবান শাসন শুরু হতে যাচ্ছে। সেটাও দুই দশক পর। তার আগেই কাবুলের বিভিন্ন দেয়াল থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে নারীদের ছবি। আফগানিস্তানের টেলিভিশন স্টেশন টোলো নিউজের প্রধান লুৎফুল্লাহ নাজাফিজাদা রোববার এরকম একটি ছবি টুইটারে শেয়ার করেছেন।
সেখানে দেখা যাচ্ছে, এক লোক কাবুলের একটি দেয়াল থেকে পণ্যের বিজ্ঞাপন হিসেবে থাকা নারীদের ছবি মুছে ফেলতে চুনকাম করছেন। গত তিন মাসে একের পর এক শহর দখল করে তালেবান যোদ্ধারা রোববার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশে করে।
রক্তপাত এড়াতে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির সরকার এখন তালেবানের হাতে ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের’ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে অন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা তালেবানের দখলে চলে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ নিরাপত্তার আশায় কাবুলে এসে আশ্রয় নিয়েছিল গত কয়েক দিন ধরে। এখন তারা মরিয়া হয়ে কাবুল ছাড়ার চেষ্টা করছেন।
প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে যাওয়ার আশায় অনেকেই ভিড় করেছেন সীমান্তে।
বিবিসি লিখেছে, তালেবান বাহিনীর অগ্রযাত্রার মধ্যে কাবুলে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত নারীরা গত কয়েক দিন ধরেই সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন করেছিলেন।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবানি শাসনামলে আফগানিস্তানে নারীদের মুখ, চুলসহ সম্পূর্ণ দেহ ঢাকা বোরখা পরা বাধ্যতামূলক ছিল। বয়ঃপ্রাপ্ত হলেই মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ।
শরিয়া আইনের নামে তারা চালু করেছিল চুরির অপরাধে হাত কেটে ফেলার শাস্তি। আর বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে দোররা এবং পাথর ছুড়ে হত্যার মত ভয়ঙ্কর সব শাস্তিই হওয়া উচিত বলে এখনও তালেবান বিশ্বাস করে।
তালেবানের একজন মুখপাত্র অবশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নারীর অধিকার আর সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি তাদের যোদ্ধারা ‘সম্মান’ দেখাবে। তবে বাস্তবে তা হচ্ছে না বলেই খবর আসছে আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকা থেকে।
আফগানিস্তানের নারী এমপি ফারজানা কোচাই বিবিসিকে বলেছেন, আফগানিস্তানের যেসব এলাকা আগেই তালেবানের দখলে চলে গেছে, সেসব এলাকার অনেক নারীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, এখন আর তারা চাকরিতে বা স্কুলে যাচ্ছেন না।
“নারীদের জন্য যে এমন ভাগ্য আসছে, সে তো জানাই ছিল। নারীদের তাদের ঘরের ভেতরে বন্দি থাকতে হবে।”
অনেক এলাকায় তালেবান কমান্ডাররা নিয়ম করেছেন, কোনো পুরুষ সঙ্গী ছাড়া নারীরা ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না।
কিছু এলাকায় ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মীদের বলা হয়েছে, তাদের কাজ এখন থেকে পুরুষরাই করবে। রেডিওতে গান-বাজনা প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারির খবরও এসেছে কোনো কোনো এলাকা থেকে।
রোববার সকালে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি কেমন ছিল, তা এক টুইটে তুলে ধরেছেন জাতিসংঘের সাবেক ইয়ুথ অ্যাম্বাসেডর আয়েশা খুররম।
Some teachers said goodbyes to their female students as everyone was evacuated from Kabul University this morning... and we might not see our graduation like thousands of students around the country.
— Aisha Khurram (@AishaKHM) August 15, 2021
Taliban are placed all over the city, just waiting for the right time...
তিনি লিখেছেন, সকালে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবাইকে সরিয়ে নেওয়ার সময় অনেক শিক্ষক তাদের ছাত্রীদের ‘বিদায়’ জানিয়েছেন।
সাননিউজ/এএসএম