আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
করোনার সময়ে ফুটে উঠেছে কলকাতার হাসপাতালগুলোর বেহাল দশা। কিছু হাসপাতাল আছে সেখানে রোগীদের বয়ে নেয়ার জন্য ট্রলি অবধি নেই। এমনই একটি হাসপাতাল হচ্ছে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সেখানে ট্রলি না থাকায় অসুস্থ বাবাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে ছুটছিলেন ছেলে। এসময় মারা যান বৃদ্ধ রোগী। এটি গতকাল বৃহস্পতিবারের ঘটনা।
জানা যায়, ওই বৃদ্ধের জ্বর ও প্রবল শ্বাসকষ্ট ছিল। তাই তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য আনা হয়েছিল। ট্রলি না থাকায় বাবাকে কোলে নিয়ে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে ছুটোছুটি করছিলেন তার ছেলে। এসময়ই মারা যান তার বাবা।
মৃত্যুর পরেও ওই ছেলেকে ভয়াবহ অমানবিকতা সহ্য করতে হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ বাবার মরদেহ আগলে দাঁড়িয়ে থাকেন ছেলে। কিন্তু হাসপাতালের কেউ এগিয়ে আসেনি তার সাহায্যে। এভাবে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মাটিতে পড়েছিলো ওই মৃতদেহ।
কলকাতায় এটি কিন্তু কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়, প্রায়ই হচ্ছে এমন অমানবিক ঘটনা। করোনা উপলক্ষে এ ধরনের ঘটনা আরও বেশি শোনা যাচ্ছে।
দিন কয়েক আগে কলকাতায় এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ক্যানসারে আক্রান্ত দুই বছরের প্রিয়াংশি সাহাকে নিয়ে ছুটি বেরিয়েছেন তার বাবা-মা। কলকাতা মেডিকেল কলেজেই প্রিয়াংশির পেটে টিউমার অপারেশন ও একবার কোমোথেরাপিও দেওয়া হয়। কিন্ত এরপর আর তাকে কেমো দেওয়া সম্ভব হয়নি। কেননা ওই হাসপাতাল ব্যস্ত ছিল করোনার রোগীদের নিয়ে। অন্য হাসপাতালেও মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি প্রিয়াংশির বাবা-মা। ফলে এক প্রকার বিনা চিকিৎসাতেই মারা গেছে প্রিয়াংশি।
এর আগে ভারতের অন্য এক রাজ্যে অসুস্থ মাকে কোলে নিয়ে ছেলের হাসপাতাল যাত্রার ছবি রীতিমতো আলোড়ন তুলেছিলো। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স ও যানবাহন না থাকায় মাকে কোলে করে হাসপাতালের দিকে ছুটতে বাধ্য হয়েছিল ছেলেটি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার সবচেয়ে পুরনো ও নামকরা সরকারি হাসপাতালে এমন ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। এরকম একটা বড় হাসপাতালে রোগীদের জন্য ট্রলি থাকবে না, এ কি করে হয়! আর কলকাতা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা চলবে বলে একটা দু বছরের শিশুকে কেমো দেয়া যাবে না?
এদিকে ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনায় বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে তারা জানান, করোনার কারণে রোগীদের প্রবল চাপ থাকায় এমনটি হচ্ছে। আর এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।
তবে সেখানে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, হাসপাতালে মৃতদেহ প্যাকিং করার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। রোগীদের খাবার দেওয়ার লোকের অভাব। রোগীদের বাড়ির লোককে তার শারীরিক অবস্থার কথা জানাবার লোকও নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সান নিউজ/ আরএইচ