আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জার্মান সরকারের করোনাভাইরাস বিরোধী পদক্ষেপের প্রতিবাদে রোববার (১ আগস্ট) বার্লিনে হাজার হাজার মানুষ বেরিয়ে পড়ে। যার ফলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয় এবং প্রায় ৬ শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই সপ্তাহান্তে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছিল। যার মধ্যে ছিল স্টুটগার্ট ভিত্তিক কোয়ার্ডেনকার আন্দোলনের একটি অংশ। তবে বার্লিনে বিক্ষোভকারীরা সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় নেমে আসে।
বার্লিনের পুলিশ বিভাগ বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য দুই হাজারেরও বেশি পুলিশ মোতায়েন করেছে। তারা বলছে, যেসব পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে তাদের অনেকেই হয়রানি বা হামলার শিকার হয়।
বার্লিন পুলিশ বলেছে, “তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আমাদের সহকর্মীদের বের করে নেবার চেষ্টা করেছিল”। অগত্যা পুলিশকে ঝাঁজালো পদার্থ বা ব্যাটন ব্যাবহার করতে হয়।
বার্লিনের শার্লটেনবার্গ পাড়া থেকে জনতা যখন টিয়ারগার্টেন পার্ক হয়ে ব্র্যান্ডেনবার্গ গেটের দিকে রওনা হয়েছিল, পুলিশ লাউডস্পিকারের মাধ্যমে সতর্ক করেছিল যে, প্রতিবাদকারীরা ছত্রভঙ্গ না হলে তারা জলকামান ব্যবহার করবে। জার্মান গণমাধ্যম বলছে, রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ প্রায় ৬শ’ জনকে আটক করেছে। বিক্ষোভকারীরা এখনও শহরে মিছিল করছে।
জার্মানি মে মাসে বেশ কিছু করোনাভাইরাস নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে, যার মধ্যে রেস্তোরাঁ এবং বারগুলি পুনরায় খোলা রয়েছে। তবুও রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া কিংবা হোটেলে থাকার জন্য, প্রমাণ হিসেবে সম্পূর্ণরূপে টিকা নিয়েছেন, ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছেন বা সাম্প্রতিক নেতিবাচক করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল ইত্যাদি দেখাতে হয়।
প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় জার্মানিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কম হলেও, গত কয়েক সপ্তাহে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে। রবিবার, জার্মানিতে ২ হাজার ৯৭টি নতুন সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে, যা আগের রবিবারের তুলনায় ৫০০-র অধিক।
কোয়ারডেনকার যা কিনা জার্মানীর সবচেয়ে দৃশ্যমান লকডাউনবিরোধী আন্দোলন, বার্লিনে হাজার হাজার লোককে বিক্ষোভে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই আন্দোলন ডান এবং বাম উভয় মতবাদের লোককে একত্রিত করেছে, যাদের মধ্যে টিকা বিরোধী, করোনাভাইরাস অস্বীকারকারী, ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদ এবং ডানচরমপন্থী গ্রুপের লোকজনও রয়েছে।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে, জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বিভাগ সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, এই আন্দোলন ক্রমবর্ধমানভাবে উগ্রবাদী আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে এবং এর কিছু অনুসারীদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
জার্মান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট উলফগ্যাং শোবল রোববার কোয়ার্ডেনকার আন্দোলনের তীব্র সমালোচনা করেন এবং মানুষকে "সস্তা স্লোগান" শুনে বোকা না বনার অনুরোধ করেন।
শোবল বলেন, “যেখানে বিশ্বব্যাপী সমস্ত বিশেষজ্ঞ বলছেন, করোনাভাইরাস খুবই বিপজ্জনক এবং একমাত্র টিকা এই ভাইরাস প্রতিরোধে সাহায্য করে, তবে কার অধিকার আছে বলার, 'আসলে, আমি এর চেয়ে বেশি স্মার্ট?' “আমার কাছে এটা দম্ভের প্রায় অসহনীয় মাত্রা”।
এ্রর আগে ইউরোপ জুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ব্যবস্থাগুলির বিরুদ্ধে আরো বিক্ষোভ হয়েছে।
টিকা দেওয়ার বিধিনিষেধের প্রতিবাদে ফ্রান্সে শনিবার দুই লাখেরও বেশি মানুষ টানা তৃতীয় সপ্তাহান্তে বেরিয়ে এসেছিল। কখনও কখনও পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এছাড়া গত সপ্তাহান্তে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ ইতালির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছে।
সান নিউজ/এমএম