আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১ মে থেকে আফগানিস্তানে সংঘাত শুরুর পর রেকর্ড সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘ থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংঘাত চলায় সেখানেই প্রধানত বেসামরিক নাগরিক নিহতের ঘটনা বেশি ঘটছে। যদি এ সংঘাত ঘনবসতিপূর্ণ শহরে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে দেশটিতে মহাবিপর্যয় হতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বছরের প্রথম ছয় মাসে রেকর্ড সংখ্যক বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। এসব হতাহতের অর্ধেকই হয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কারণে। ১ মে থেকে সংঘাতের তীব্রতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এ সময়ে ৭৮৩ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়, আহত হয় এক হাজার ৬০৯ জন। প্রথম চার মাসেও একই পরিমাণ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
জাতিসংঘের ২০০৯ সাল থেকে রেকর্ড করা তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে-জুন মাসে হতাহতের সংখ্যা সর্বোচ্চ। ২০০১ সালে তালেবান শাসনের অবসানের পর এটাই আফগানিস্তানের প্রথম ভয়াবহ অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তালেবান ও আফগান নেতাদের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সংঘাতের যে বিধ্বংসী প্রভাব পড়ছে সে ব্যাপারে যত্নবান হতে বলেছেন দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি দেবোরাহ লিওনস।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, চলমান সহিংসতা বন্ধ না হলে নজিরবিহীনভাবে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা ঘটবে দেশটিতে। দুই-তৃতীয়াংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে তালেবান ও আইএসআইএস’র কারণে এবং কিছু হচ্ছে সরকার ও তাদের মিত্রদের কারণে।
সংঘাতের কারণে বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভয়ানকভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সব থেকে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে কাবুলের একটি বালিকা বিদ্যালয়ে। সেখানে কমপক্ষে ৮৬ জন লোক নিহত হয়, আহত হয় দুই শতাধিক। পুঁতে রাখা মাইনের কারণে অধিকাংশ হতাহতের ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে তালেবানের দখল করা এলাকাগুলোতে রাস্তা এবং বাড়ির মধ্যে আক্রমণের ঘটনা বেশি ঘটছে।
এদিকে সরাসরি সংঘাতের ফলেও ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সংঘাত যদি শহরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে নিহতের সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। মে ও জুন মাসে যে সহিংসতা হয়েছে তার অধিকাংশই হচ্ছে শহরের বাইরে যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুবই কম।
জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবেদনে বলে, যদি শহর এলাকায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হয় তাহলে বেসামরিক নাগরিকদের জীবনে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে। মে-জুন মাসে তালেবান যেসব এলাকা দখলে নিয়েছে, সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের বাড়ি, স্কুল, ক্লিনিক, মোবাইল ফোনের টাওয়ার ও দোকান লুট করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান দেশটির অধিকাংশ এলাকা দখলে নেয় এবং সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।
সান নিউজ/এমএইচ