আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যা, ভূমিধসে শতাধিক মৃত্যু ও বহু ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পশ্চিম জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় শনিবার (১৭ জুলাই) প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এক হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। ভয়াবহ বন্যায় ছোট ছোট ছবির মতো কয়েকটি শহর নিমেষেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। -সূত্র বিবিসি
মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। শনিবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে এ খবর জানা গেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার সারাদিন ও বৃহস্পতিবার রাতজুড়ে প্রবল বৃষ্টির কারণে রাইন ও মোজেল নদীর পাহাড়ি শাখা নদীগুলোর দুই কূল উপচে পড়ে। খরস্রোতা নদীর পানি ছোট শহরগুলোতে ঢুকে পড়ে। বাসিন্দারা কিছু বোঝার আগেই নদীগুলোর পানি রাস্তা ও ঘরবাড়িতে ঢুকে যায়।
চারদিকে পানি আর পানি। মাঝে মাঝে বাড়ির মাথাগুলো উঁকি দিচ্ছে। দেখে মনে হয় জনবসতির ওপর দিয়ে নদী বয়ে গেছে। কোথাও একতলা, আবার কোথাও দোতলা সমান পানি।
ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ি ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এমনই ছবি উঠে আসছে পশ্চিম এবং দক্ষিণ জার্মানি থেকে। আবহাওয়াবিদরা এই এলাকায় আরও ভারি বৃষ্টির আভাস দিয়েছেন। সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কোলন শহরের পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বন্যাপীড়িত এলাকায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুজন কর্মী নিহত হয়েছেন। জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে গত কয়েক দশকে এমন বন্যা আর দেখা যায়নি। বন্যাদুর্গত আরভেইলার অঞ্চলে অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হেলিকপ্টারে করে দুর্গত এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেটে। শুধু ওই অঞ্চলেই ১৩০০ মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। জার্মানির আবহাওয়া দপ্তরের মুখপাত্র অ্যান্ড্রিয়াস ফ্রেডরিক জানান, বেশ কিছু জায়গায় যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তা গত ১০০ বছরেও হয়নি।
পশ্চিম জার্মানির বেনেলাক্স অঞ্চল, উত্তর রাইন-ওয়েস্টফালিয়া এবং রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেট সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ওই সব অঞ্চলে কোথাও ১৫০ মিলিমিটার, কোথাও আবার ২০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
শুধু জার্মানি নয়, বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবেশী দেশ নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও। বেলজিয়ামের দক্ষিণ ভাগের ওয়ালোনিয়ায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় নর্থ রাইন- ওয়েস্টফালিয়া প্রদেশের গভর্নর আরমিন ল্যাশেট এই চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দায়ী করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়া ফিরে ফিরে আসার ঘটনা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সান নিউজ/এমএম