আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইঁদুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ অস্ট্রেলিয়ায় পূর্বাঞ্চল। দেশটিতে ইঁদুরের উৎপাত এতোই বেড়ে গেছে যে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। ইঁদুর থেকে রক্ষা পেতে অস্ট্রেলিয়ায় অনেক কৃষক বালতিতে পানি নিয়ে ফাঁদ তৈরি করেছেন। অস্ট্রেলিয়াতে ইঁদুরের মহামারি কিভাবে মোকাবেলা করা হবে তা নিয়ে প্রচণ্ড বিতর্ক চলছে।
কেউ কেউ বিষ প্রয়োগের কথা বলছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ না করে দিয়েছে। কেউ কেউ বলছে সাপ ছেড়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু এটাও তো অন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাহলে এর সমাধান কী? এর উত্তর খুঁজেছেন দ্য ক্যানবেরা টাইমসের স্টিভ ইভান্স।
আমার এক বন্ধু এখনও ইঁদুরের শেষ মহামারির কথা স্মরণ করতে পারেন। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের ডাবো শহরে ছিল তার বাড়ি। ইঁদুর এই বাড়িটি দখল করে নিয়েছিল। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল এই ইঁদুর। শত শত। দরজার নিচে দিয়ে ঢুকে পড়ছে, ওপরের ঘরে তাদের ছোটাছুটি করার শব্দ, চারদিকে বিরক্তিকর দুর্গন্ধ, এছাড়াও এমন গর্তের ভেতরে ইঁদুর মরে পড়ে থাকছে যেখান থেকে বের করে আনারও কোনো উপায় নেই।
তার কাছে এই সমস্যার সমাধান ছিল আঠালো কাগজ দিয়ে তৈরি নিষ্ঠুর এক ফাঁদ। ইঁদুরগুলো এর ওপর দিয়ে হেঁটে গেলে তাতে আটকা পড়তো। তারপর সেগুলোকে সেখান থেকে তুলে বালতি-ভর্তি পানিতে চুবিয়ে মারা হতো। এখনও তিনি ইঁদুরের সেই তীক্ষ্ণ চিৎকারের ভয়াবহতা স্মরণ করেন।
বর্তমান মহামারিতে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে আনার সব ধরনের উপায় পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। বাজারে হার্ডওয়্যারের দোকানগুলোতে ইঁদুর ধরার যতো ধরনের ফাঁদ আছে সেগুলোর প্রায় সব বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে লোকজন এখন তাদের নিজেদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা দিয়ে কিছু করার চেষ্টা করছে।
যেমন একজন একটা পানিভর্তি বালতির কিনারে ভেজিটেবল তেল মাখিয়ে সেখানে কিছু চীনাবাদামের মাখন এমনভাবে রেখে দেওয়া হচ্ছে যাতে তার লোভে ইঁদুর পানিতে এসে পড়ে। যখন ইঁদুর এই মাখন খাওয়ার লোভ সামলাতে পারে না এবং বালতির কিনারে এসে পিছলে গিয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।
এবিষয়ে লোকজন নানা ধরনের সুপারিশ একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করছে। ক্যানবেরা শহরের উত্তরে অবস্থিত ছোট্ট একটি শহরের পরিচ্ছন্নতা কর্মী স্যু হজ বলেন, ‘আটার মধ্যে প্লাস্টার অব প্যারিস দিলে শেষ পর্যন্ত ইঁদুর মারা যাবে কিন্তু আমি দেখতে চাই ইঁদুর কোথায় মারা যায়, যাতে আমি মরা ইঁদুরটিকে সরিয়ে ফেলতে পারি।’
তিনি ফাঁদ পছন্দ করেন, যদিও এগুলো একেবারেই অব্যর্থ নয়। তিনি মনে করেন, ‘হালকা-পায়ের ইঁদুরগুলো ফাঁদের মধ্যে রাখা খাবার খেয়ে জীবন নিয়েই সেখান থেকে সটকে পড়তে পারে।’
এখানকার কিছু কিছু কৃষক পুরো একটি শিপিং কন্টেইনারকেই ফাঁদে পরিণত করেছেন। তাদের কৌশল হচ্ছে শত শত ইঁদুর আকৃষ্ট করে সেগুলোকে কন্টেইনারের এক প্রান্তে নিয়ে আসা। কন্টেইনারের অপর প্রান্তে রাখা আছে একটি পানির ট্যাঙ্ক। কন্টেইনারের ভেতরে এমনভাবে টোপ রেখে দেওয়া হয় যাতে সেগুলো খাওয়ার লোভে ইঁদুরগুলো তার ভেতর দিয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে ট্যাঙ্কের ভেতরে গিয়ে পড়ে।
এরকম একটি ফাঁদ পাতা খুব কষ্টসাধ্য এবং এরকম ফাঁদের সংখ্যাও খুব বেশি নেই। ফলে অনেক কৃষকই ব্যাপক হারে বিষ প্রয়োগের পক্ষে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিউ সাউথ ওয়েলসের সরকার তিন কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে যা দিয়ে ব্রোমাডায়োলোন নামের রাসায়নিক কেনা হবে। এই রাসায়নিক ‘ইঁদুরের নাপাম বোমা’ হিসেবে পরিচিত।
তবে এর বিপদ হলো- এর ফলে বাকি সবকিছুও বিষে আক্রান্ত হতে পারে। ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পরিবেশ। এই রাসায়নিক প্রয়োগ করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইঁদুর মারা যাবে তবে এটি কার্যকর থাকে আরও কয়েক মাস। শিকারি প্রাণীরা বিষপ্রয়োগে মারা যাওয়া প্রাণী খাওয়ার কারণে এই রাসায়নিক ফুড চেইন বা খাদ্যচক্রের ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে।
আর একারণে অস্ট্রেলিয়ায় এসংক্রান্ত কর্তৃপক্ষ এই রাসায়নিক ব্যবহারের ব্যাপারে অনুমতি দিচ্ছে না। এই পরিস্থিতি ইঁদুর নিধনের জন্য কেউ কেউ আরও কিছু উপায়ের প্রস্তাব করেছেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
সাননিউজ/এএসএম